বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ বঙ্গভূমি থেকে তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারদের বিদেশে ট্রায়াল দিতে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে এবার এই তালিকায় যুক্ত হলো একটা নতুন ও বিশেষ নাম। জেলার ফুটবল ক্লাব থেকে সুদূর স্পেনে ট্রায়ালের জন্য যাচ্ছেন বাংলার এক জন বা দুই জন নয়, মোট ৬ জন ফুটবলার। এই ৬ জনের মধ্যে একজন হলেন নদিয়া জেলার প্রেমাংশু। তার গল্পটা বাকিদের থেকে কিছুটা আলাদা।
বাংলার প্রত্যন্ত জেলা থেকে ফুটবল প্রতিভা তুলে আনার লক্ষ্য নিয়ে আইএফএ-র সঙ্গে জড়িত হয়েছিল বাংলা নাটক ডট কম। ইউ এক্সেল স্পোর্টস ভেনচার এর সহযোগিতায় সকলের মিলিত প্রয়াসে দুটি মডেল জেলা হিসেবে পুরুলিয়া ও নদীয়া থেকে চারজন ও উত্তর চব্বিশ পরগনা ও হুগলি থেকে এক জন করে মোট ছয় জন তরুণ প্রতিভা কে তুলে আনা হয়েছে যারা কয়েক মাসের মধ্যেই মন্ট্রিল ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে ফুটবল শেখার জন্য পাড়ি দেবেন স্পেনে। প্রেমাংশু ছাড়া বাকি যে পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছেন, তারা হলেন মহেশ্বর সিং সরদার, দেবজিত রাউত ,অরিজিৎ বিশ্বাস, অনিকেত মণ্ডল ও বিশাল সূত্রধর। মন্ট্রিলের প্রশিক্ষক ফেরেন্দ তোরেস ও বাংলার প্রথম প্রো লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রশিক্ষক শঙ্করলাল চক্রবর্তী এই ফুটবলারদের বেছে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন।
এবার প্রেমাংশুর প্রসঙ্গে আসা যাক। নদীয়ার তেহট্ট থানার নাজিরপুর দুর্জয় সংঘের সাথে কোচিং করে ফুটবলার হয়ে উঠার পথে পা বাড়িয়েছে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র প্রেমাংশু ঠাকুর। বাকি ৫ জন নির্বাচিত তরুণের সাথে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে স্পেনের উদ্দেশ্য রওনা দেবে সে। প্রেমাংশুর স্পেন যাত্রা যে এলাকার পাশাপাশি গোটা নদিয়া জেলার নাম উজ্বল করবে তা জানাতে ভোলেননি দুর্জয় সংঘের সম্পাদক দিলীপ সরকার।
ছোটবেলা প্রেমাংশুর জন্মের পর বাবা তাকে ও তার মা-কে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন। তার মা দুর্গা সরকার অনেক পরিশ্রম করে তাকে বড় করেছিলেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার জ্বালা ভুলতে পরিচারিকার কাজ করে ছেলের পড়াশুনোর খরচ জুগিয়েছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই প্রেমাংশু ফুটবল পাগল। অনেক শাসন করেও ছেলের মাথা থেকে ফুটবলের ভুত নামাতে পারেননি। আজ ছেলে সেই ফুটবলের জোরেই এতবড় জায়গায় পৌঁছিয়েছে দেখে অভিভূত দুর্গা দেবী।
ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় অমনোযোগী প্রেমাংশুর ধ্যান ও জ্ঞান হল ফুটবল। লিও মেসির ভক্ত প্রেমাংশু ছোটবেলায় টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জুতো কিনে ফুটবল খেলতে শুরু করে। এই মুহূর্তে নিজের পাসপোর্ট তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। মা একসময় তাকে বোর্ডিং স্কুলে রেখে পড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তবু ফুটবলকে তার মন থেকে দূরে সরাতে পারেনি। এই ফুটবলকে দিয়েই নিজের বাবাকে জবাব দিতে চায় প্রেমাংশু। শিখরের উচ্চতায় পৌঁছে প্রমাণ করতে চায় যে সেদিন বাবা যে তাকে এবং তার মা-কে ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেটা একটা অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।