বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ সম্প্রতি অনেকেই তার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ভারতের হয়ে কত দুটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েও তার ব্যাটিংয়ের ধাঁচ আদেও আজকালকার পরিবর্তিত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যুগের পক্ষে উপযুক্ত কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। আজ যে তাদেরকে সম্পূর্ণ চুপ করিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি এটা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু বিরাট কোহলি প্রমাণ করেন তিনি নিজের ছন্দে, নিজের মতো করেই নিজের দলকে এখনো ম্যাচ জিতানোর ব্যাপারে পারদর্শী।
তার এবং আরসিবি অধিনায়ক ফ্যাফ দু প্লেসিসের জুটি আজ ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এর আগে আইপিএলের ইতিহাসে কোন ওপেনিং জুটির ৮০০ রানের গণ্ডি ছুঁতে পারেননি। কিন্তু মাত্র দুই মরশুম একসাথে ব্যাট করেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছেন ফ্যাফ এবং বিরাট। নিজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজও ৪৭ বলে ৭১ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন আরসিবি অধিনায়ক। কোহলির সঙ্গে গড়েছেন ১৭২ রানের জুটি। কিন্তু আজ যাবতীয় পাদপ্রদীপের আলো একা কেড়ে নিয়ে গিয়েছেন কোহলি।
প্রথম ইনিংসে অত্যন্ত আগ্রাসী ব্যাটিং করে শতরান করেছিলেন হেনরিক ক্লাসেন (১০৪)। দ্বিতীয় ইনিংসে তার পাল্টা দিয়ে নিজের ষষ্ঠ আইপিএল শতরানটি করলেন বিরাট কোহলি। তার ইনিংসটা কি দক্ষিণ আফ্রিকার তারকার চেয়ে বেশি মনোমুগ্ধকর ছিল। কারণ ক্লাসেন শতরান করেছিলেন ২০০-র বেশি স্ট্রাইক রেটে। এই নিয়ে হয়তো প্রশ্ন থেকে যাবে। কিন্তু ভক্তরা এইভাবে সন্তুষ্ট হবেন যে আজ তাদের প্রিয় চেজ মাস্টার বিরাট কোহলিকে মাঠে নিজেরে পরিচিত ছন্দে ফিরতে দেখা গেছে এমন একটি দলের বিরুদ্ধে যাদের বিরুদ্ধে শেষ দুইবারের সাক্ষাতে তিনি গোল্ডেন ডাকে আউট হয়েছিলেন।
ক্রিস গেইলের সঙ্গে এই মুহূর্তে আইপিএলে যুগ্মভাবে সবচেয়ে বেশি শতরান করার রেকর্ডটি এখন বিরাটের নামের সাথে জুড়ে গেলো। ভবিষ্যতে তিনি এই রেকর্ডটি ভেঙেও ফেলতে পারেন। আর বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ফরমেটে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শতরান করার রেকর্ডটিও তার নামের পাশেই জ্বলজল করছে। আজ তিনি আরসিবির জার্সি গায়ে ৭৫০০ রানের গণ্ডিও পেরিয়ে গিয়েছেন। এটি ছিল এই আইপিএলে তার প্রথম শতরান। কিন্তু শতরানের চেয়েও বেশি তিনি যেভাবে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং করে কপিবুক শট খেলে এই ইনিংসটি গড়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। আজ তিনি ১০৩ মিটারের দূরত্বের একটি ছক্কা মেরেছিলেন যা সচরাচর তার ব্যাট থেকে দেখা যায় না।
সানরাইজার্স বোলাররা আজ কোনভাবেই আটকাতে পারেননি তাকে। অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন যে পাওয়ার প্লে-তে আগ্রাসী ব্যাটিং করার পরে তিনি থমকে যাবেন। কিন্তু ৩৫ বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করার পর বাকি ৫০ রান করতে বিরাট কোহলি সময় নেন ১৭ বল। আর আজকের ৬৩ বলে ১০০ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১২ টি চার ও ৬ টি ছক্কা দিয়ে। পরে কোহলি এবং দু প্লেসিস আউট হয়ে গেলেও ব্রেসওয়েল ও ম্যাক্সওয়েল জয়ের জন্য সামান্য যে কাজটুকু প্রয়োজন ছিল সেটুকু সেরে ফেলেন চার বল বাকি থাকতেই। কিউয়ি অলরাউন্ডার ব্রেসওয়েল (২/১৩) আপাতত ব্যাটিংয়ের চেয়ে বল হাতেই আরসিবির জন্য বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে আজকের ম্যাচে অত্যন্ত কৃপণ বোলিং করে একটি উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছিলেন মহম্মদ সিরাজও (১/১৭)। আপাতত ১৩ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে বেশ ভালো জায়গায় রয়েছে আরসিবি। কিন্তু শেষ ম্যাচে গতবারের চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্সকে না হারাতে পারলে এই জয় অর্থহীন হয়ে যাবে।