বাংলা হান্ট ডেস্ক: ২ জুন, ২০২৩। এই দিনটি “অভিশপ্ত” হয়ে রইল ভারতীয় রেলের (Indian Railways) কাছে। ওড়িশার (Odisha) বালাসোরে (Balasore) গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বালাসোরের বহনাগা রেল স্টেশনের কাছে ওই ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ২ টি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং ১ টি মালগাড়ির এই সংঘর্ষের ফলে ট্রেনের বগিগুলি লাইনচ্যুত হয় এবং উল্টে যায়। প্রায় ২০০ মিটার পর্যন্ত এই সংঘর্ষের আওয়াজ শোনা গিয়েছিল।
এখনও পর্যন্ত এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। পাশাপাশি, ৯০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছন বলে জানা গেছে। এদিকে, এহেন দুর্ঘটনার পরেই ৪২ বছর আগে এই জুন মাসেই ঘটা বিহারের একটি ট্রেন দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরে এসেছে। ওই ট্রেন দুর্ঘটনাটিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেন দুর্ঘটনা বলে মনে করা হয়। যেটিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৮০০ জন। বর্তমান প্রতিবেদনে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করা হল।
দেশের সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা: উল্লেখ্য যে, আজ থেকে ঠিক ৪২ বছর আগে অর্থাৎ, ১৯৮১ সালের ৬ জুন মানসী-সহরসা রেল সেকশনে যাত্রী ভর্তি একটি ট্রেন বদলা ঘাট-ধামারা ঘাট রেল স্টেশনের মাঝে ব্রিজ নম্বর-৫১-তে পৌঁছনোর পর উল্টে যায়। শুধু তাই নয়, এর ফলে ট্রেনের ৯ টি বগি উত্তাল বাগমতি নদীতে তলিয়ে গিয়েছিল। মূলত, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই ট্রেনটি মানসী থেকে সহরসা যাচ্ছিল। তবে, সরকারিভাবে এই ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৩০০ হলেও স্থানীয়দের দাবি ছিল যে, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রায় ৮০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।
উত্তাল নদীতে তলিয়ে যায় ৯ টি বগি: ১৯৮১ সালের ৬ জুন বিকেল ৩ টে নাগাদ বদলা ঘাটে পৌঁছয় ওই ট্রেনটি। তারপর সেটি ধীরে ধীরে ধামারা ঘাটের দিকে এগোতে থাকে। এদিকে, কিছুদূর যাওয়ার পরেই হঠাৎই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। পাশাপাশি শুরু হয় প্রবল ঝড় এবং বৃষ্টি। ততক্ষণে ট্রেনটি রেলের ৫১ নম্বর সেতুর কাছে পৌঁছে যায়। এদিকে, ট্রেনটি যথেষ্ট গতিশীলও ছিল। তখনই ট্রেনের চালক সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষলে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। পাশাপাশি, ৯ টি বগি সেতু থেকে সরাসরি উত্তাল বাগমতি নদীতে গিয়ে পড়ে।
চালকের কি কোনো দোষ ছিল: মূলত, ওই দুর্ঘটনায় যাত্রীরা নিজেদের বাঁচানোর কোনো সুযোগ পাননি বলেই জানা গিয়েছিল। এমনকি, দুর্ঘটনার পর বেশ কিছুদিন ধরে ট্রেনের বগিতে যাত্রীদের মৃতদেহ আটকে ছিল। এটি ভারতের সবথেকে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে ট্রেনের চালক কেন হঠাৎ ব্রেক কষেছিলেন সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। যদিও, এই প্রসঙ্গে একাধিক তথ্য উঠে এসেছে।
একটি কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে যে, হঠাৎ করে রেললাইনে গবাদি পশু চলে আসায় তাদের বাঁচাতে চালক ব্রেক প্রয়োগ করেছিলেন। অন্যদিকে, আরেকটি কারণ হিসেবে জানা যায়, প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে যাত্রীরা ট্রেনের সব বগির জানালা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে ঝড়ের তীব্রতায় সব চাপ ট্রেনের ওপর গিয়ে পড়ে এবং বগিগুলি নদীতে তলিয়ে যায়।