বাংলা হান্ট ডেস্ক : উলট পুরান! ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেললেন গৃহবধূ অপর্ণা বর্মণ। রাজ্যে তিনিই প্রথম বিজেপি (Bharatiya Janata Party) প্রার্থী যিনি কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেলেন কোনও নির্বাচনে। সাধারণত, এমন জয়ের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ ছিল। এ বারে জেলা পরিষদে না হলেও গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে এমন অনেক আসন রয়েছে, যেখানে কোনও বিরোধী দলের প্রার্থী নেই। কিন্তু বিজেপির ক্ষেত্রে অপর্ণাই অনন্যা। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থীই নেই।
সেটা আবার হয়েছে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জেলায়। তাঁরই লোকসভা এলাকা বালুরঘাটের অন্তর্গত গঙ্গারামপুর বিধানসভার উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের নাকাইর গ্রামের প্রার্থী হয়েছেন অপর্ণা। বিজেপির দাবি, মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ওই আসনে তৃণমূল বা সিপিএম কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি। স্থানীয়রাও বলছেন, এই এলাকায় প্রায় সব পরিবারই বিজেপি করেন। কেউ কেউ অন্য দল করলেও তাঁদের বাড়ির কোনও মহিলা প্রার্থী হতে চাননি।
এত কিছু কিন্তু জানেন না অপর্ণা। তিনি যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছেন, তা মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়েও জানতেন না। প্রথম বার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই এমন জয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি তিনি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বরাবরই রাজনীতি করেন। ওঁর কথায় এবং নেতাদের কথায় প্রার্থী হয়েছি। তবে আমি জানতাম না ভোটের আগেই জিতে যাব। গ্রামের মানুষও খুব খুশি আমার জয়ের খবর শুনে। পঞ্চায়েত যদি আমাদের দখলে চলে আসে, আমি খুব কাজ করব।’
স্বামী সাগর বর্মণ আগে লরি চালাতেন। কিন্তু এখন সব্জির গাড়ি চালান। তাতে যে সংসারের সবটুকু প্রয়োজন মিটে যায়, তা নয়। তাঁকেও বিড়ি বেঁধে কিছু রোজগার করতে হয়। এর পরে সংসারের সব কাজ, দশম এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া দুই ছেলের সব দায়দায়িত্ব পালন করে রাজনীতি করার সময় পাবেন? অপর্ণা হাসতে হাসতে বললেন, ‘মেয়েরা সব পারে। কথায় বলে, যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।’ অপর্ণা চুল বাঁধেন কি না জানা নেই, তবে তিনি নিয়মিত বিড়ি বাঁধেন।
অপর্ণা না জানলেও তাঁর স্বামী সাগর জানেন যে, স্ত্রী নজির তৈরি করে ফেলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সবাই বিজেপি। বিরোধী বলে কিছু নেই। গত বারও আমরাই সব ভোট পেয়েছিলাম। তবে গণনায় গোলমাল হয়েছিল। এ বার অন্য দলের কেউ প্রার্থী খুঁজেই পায়নি। গ্রামের কেউ রাজি হননি।’
রাজ্য সভাপতির শহর বালুরঘাট থেকে খুব দূরে নয় অপর্ণাদের গ্রাম। সাগর বললেন, ‘বালুরঘাটের কাছেই ফুলবাড়ি হাইস্কুল। একটু এগোলেই হনুমান মন্দির। তার পাশের গলিতে ঢুকলেই আমাদের বাড়ি।’ বাড়ি মানে টিনের দেওয়াল, টিনের চাল। আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি বিজেপির পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী। উজালা প্রকল্পে রান্নার গ্যাসের সংযোগ পেলেও কাঠকুটো জ্বালিয়েই মূলত রান্না হয়।