বাংলাহান্ট ডেস্ক : মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) শোনা যায় দেশভাগের নানান স্লোগান। দাবি উঠে অখন্ড ভারতের (India)। জানেন কি স্বাধীনতার আগে কোন কোন দেশ ছিল ভারতের অন্তর্গত? কেনইবা সেই দেশগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ভারত থেকে? আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরব সেই তথ্য।
একটা সময় হিমালয় থেকে ভারত মহাসাগর এবং ইরান থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ভারতবর্ষ। ১৮৫৭ সালে আমাদের দেশের আয়তন ছিল ৮৩ লাখ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে যা ৩৩ লাখ বর্গ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্বজুড়ে এমন বহু দেশ রয়েছে যেগুলি একটা সময় ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। তবে পরবর্তীতে সেগুলি আলাদা হয়ে যায়।
পাকিস্তান : ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশদের দ্বারা ভারত থেকে বিভক্ত হয়ে যায় পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে ফের বিভক্ত হয়ে যায় পাকিস্তান। উৎপত্তি হয় বাংলাদেশের। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকলেও পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে শত্রুতা। যদিও একটা সময় এই দুই দেশই ছিল ভারতের অন্তর্ভুক্ত।
নেপাল : একটা সময় দেবধর নামে পরিচিত ছিল নেপাল। ১৯০৪ সালে ভারতের থেকে নেপালকে আলাদা করে দেয় ব্রিটিশরা। সম্রাট অশোক এবং সমুদ্রগুপ্তের রাজত্বকালে নেপাল ছিল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৫১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর কাছে নেপাল এবং ভারতকে একীভূত করার আবেদন জানিয়েছিলেন সে দেশের রাজা ত্রিভুবন সিং। যদিও সেই আসো পূরণ হয়নি।
থাইল্যান্ড : থাইল্যান্ড একটা সময় ছিল ভারতের অন্তর্ভুক্ত। সে সময় এই দেশের নাম ছিল স্যাম। এখানকার প্রধান শহরগুলি হলো অযোধ্যা, শ্রী বিজয়। তৃতীয় শতাব্দীতে সে দেশে নির্মাণ শুরু হয়েছিল বৌদ্ধ মন্দির। আজও যদি থাইল্যান্ডের যান তাহলে দেখতে পাবেন সেখানে বহু শিব মন্দির রয়েছে। ব্যাঙ্ককে রয়েছে শতাধিক হিন্দু মন্দির।
কম্বোডিয়া : একটা সময় ভারতের সঙ্গে যুক্ত ছিল কম্বোডিয়া। সেখানকার জাতীয় ভাষা সংস্কৃত। একটা সময় এখানকার মানুষ শিব, বিষ্ণু এবং বুদ্ধের পূজা করত। আজও সেখানকার বহু মন্দিরেই রামায়ণ মহাভারত সম্পর্কিত চিত্রকর্ম রয়েছে।
ভিয়েতনাম : ভিয়েতনামের প্রাচীন নাম চম্পাদেশ। এখানকার প্রধান শহরগুলি হল ইন্দ্রপুর, অমরাবতী এবং বিজয়। আজও এই দেশে বহু শিব, লক্ষ্মী, পার্বতী এবং সরস্বতী মন্দির। ভারতবর্ষ থেকে এই দেশ আলাদা হয়ে গেলেও এখনও এখানে পূজিত হন দেবাদিদেব মহাদেব।
মালয়েশিয়া : একটা সময় মালেশিয়ার প্রাচীন নাম ছিল মালয় দেশ। এটি একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ পাহাড়ের দেশ। রামায়ণ এবং রঘুবংশমেও এই দেশের বর্ণনা রয়েছে। ভারতের থেকে আলাদা হয়ে গেলেও আজও সে দেশে পতিত হন দেবী দুর্গা এবং গণেশ।
মায়ানমার : ১৯৩৭ সালের আগেই ভারতের থেকে মায়ানমারকে আলাদা করে দেয় ব্রিটিশরা। এ দেশের প্রাচীন নাম ছিল ব্রহ্মদেশ।
তিব্বত : তিব্বতের প্রাচীন নাম ত্রিবিস্টম। ১৯০৭ সালে চীনা এবং ব্রিটিশদের মধ্যে একটি চুক্তির পর এই দেশের একটি অংশ চীনকে এবং অন্যটি লামাকে দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জওহরলাল নেহেরু চীনা জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রদর্শনের জন্য তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
ভুটান : ১৯০৬ সালে ভারতের থেকে আলাদা হয়ে যায় ভুটান। এই শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ভূ উত্থান থেকে। যার অর্থ উচু ভূমি।
আফগানিস্থান : একটা সময় আফগানিস্তানের নাম ছিল উপগানস্থান এবং কান্দাকারের নাম ছিল গান্ধার। মহাভারতে গান্ধারের উল্লেখ পাওয়া যায়। শাহজাহানের রাজত্বকাল পর্যন্ত এটি ছিল ভারতের অংশ। তবে ১৮৭৬ সালে রাশিয়া এবং ব্রিটেনের মধ্যে গন্ডামক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় আর তারপরেই আলাদা দেশ হিসেবে গৃহীত হয় আফগানিস্তান।
শ্রীলংকা : ১৯৩৫ সালে ভারতের থেকে শ্রীলঙ্কাকে আলাদা করে ব্রিটিশরা। একটা সময় এই দেশের পুরো নাম ছিল সিংহলদ্বীপ। সেই নাম পরবর্তীতে বদলে রাখা হয় সিলন। সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে শ্রীলংকার নাম ছিল তাম্রপর্ণী। অশোকের পুত্র মহেন্দ্র এবং তার কন্যা সংঘমিত্রা বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। একটা সময় এটি ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে আলাদা দেশের পরিণত হয়েছে।