বাংলা হান্ট ডেস্ক : রানী দুর্গাবতী (Rani Durgabati) ছিলেন মধ্যপ্রদেশের গন্ডোয়ানা অঞ্চলের নায়িকা। তিনি ১৫২৪ সালের ৫ই অক্টোবর কালিঞ্জরের রাজা কীর্তিবর্মন দ্বিতীয় চান্দেলার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার রাজ্য ছিল গড়মন্ডলা, যার কেন্দ্র ছিল জবলপুর। তিনি তার সাহস, ন্যায়বিচার এবং সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি তার জীবদ্দশায় অনেক যুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন। মূলত তাঁর বীরত্বেই গড়মন্ডলা বাহিনী একাধিক যুদ্ধে জয়লাভ করে।
স্বামীর মৃত্যুর পর সিংহাসন গ্রহণ করেন রানী দুর্গাবতী। এর পাশাপাশি ছেলেকে একই পথ দেখান। তার শেষ যুদ্ধ ছিল মুঘল সম্রাট আকবরের সেনা স্বামী খাজা আব্দুল মজিদ আসফ খানের সাথে। এই সময় আহত হয়েও তিনি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত, তিনি মোগলের হাতে আত্মসমর্পণ বা মারা যাওয়ার চেয়ে, নিজেকে ছুরি দিয়ে ছুরিকাঘাত করাই উপযুক্ত মনে করেছিলেন।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের গণ্ডোয়ানা রাজ্যের রাজা সংগ্রাম শাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র দলপৎ শাহ মারভিয়ার ঘরণী হয়ে আসেন চান্দেলরাজ কিরীট রায়ের কন্যা দুর্গাবতী। রাজকন্যা থেকে রাজরাণী দুর্গাবতী। ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে দুর্গাবতীর কোল আলো কর এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। তার নাম দেওয়া হয় বীরনারায়ণ। ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে মারা যান স্বামী দলপৎ শাহ। একমাত্র পুত্র তখন নিতান্তই নাবালক। তাই গণ্ডোয়ানার রাজসিংহাসনে বসলেন রাণী দুর্গাবতী।
সিংহাসনে বসেই সিংহগড় থেকে সাতপুরা পর্বতমালায় অবস্থিত সুরক্ষিত চৌরগড় দুর্গে স্থানান্তরিত করলেন রাজধানী। এদিকে দিল্লির মসনদে তখন তৃতীয় মোগল সম্রাট আকবর। ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে আকবর মালব দখল করলেন। এর ফলে রাণীর রাজ্যসীমা মোগল সাম্রাজ্যকে স্পর্শ করলো। মোগল সেনাপতি খাজা আব্দুল মজিদ আসফ খানের নজর পড়লো রাণী দুর্গাবতীর সমৃদ্ধশালী রাজ্য গণ্ডোয়ানার ওপর। ১৫৬৪ সালে আসফ খান আক্রমণ করলেন রাণী দুর্গাবতীর গণ্ডোয়ানা রাজ্য।
রাণী মনে করতেন, অসম্মানের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। তাই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মোগল বাহিনীর সঙ্গে অসম যুদ্ধে নরাই নামক স্থানে চললেন রাণী দুর্গাবতী। গৌড় ও নর্মদার মাঝে অবস্থিত এই নরাই নামক স্থানেই শুরু হলো দু’ পক্ষের ভয়ংকর লড়াই। যুদ্ধে রাণীর ফৌজদার অর্জুন দাস মারা গেলেন। রাত নামলো যুদ্ধক্ষেত্র নরাইয়ে। রাণী চাইলেন রাতেই শত্রুশিবিরে আক্রমণ করতে। কিন্তু পাত্র-মিত্ররা রাজি না হওয়ায় তা সম্ভব হলো না। এদিকে সকাল হতেই বড়ো বন্দুক হাতে তেড়ে এলেন মোগল সেনাপতি আসফ খান। রাজকুমার বীরনারায়ণ শুরু করলেন তুমুল যুদ্ধ। বীরনারায়ণের বীরত্বে এই অসম যুদ্ধেও তিন তিনবার সুসজ্জিত মোগল বাহিনী পিছু হটে যায়।
কিন্তু একসময় এই যুদ্ধে আহত হন বীরনারায়ণ। নিরাপদে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়েন তিনি। হাতির পিঠে চেপে এবার যুদ্ধক্ষেত্রে এলেন রাণী দুর্গাবতী। তাঁর বীরত্বে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছিল মোগল সেনা। হঠাৎই একটা তীর এসে লাগে রাণীর কানের পাশে। এরপর ঘাড়েও লাগলো আরও একটা। যন্ত্রণায় সংজ্ঞা হারান রাণী। চেতনা ফিরে পেতেই মাহুত তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু রাণী শুনলেন না। যুদ্ধক্ষেত্রেই আত্মাহুতি দিলেন বীরাঙ্গণা রাণী দুর্গাবতী।