বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দেশীয় রাজনীতিতে এখন সবথেকে চর্চিত বিষয় হল I.N.D.I.A জোট। দেশের সমস্ত বিজেপি, মোদী বিরোধী দল নেতারা এই জোটে নাম লিখিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই জোটে সবথেকে উল্লেখ্য দলগুলিই নাম লিখিয়েছে। বিশেষ করে যেই দলগুলো সবথেকে বেশি চর্চিত তাঁর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোদী বিরোধী নীতিই এই জোটে তাদের এগিয়ে রাখছে।
যদিও, বিজেপিও কম যায় না। বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোটও দিন দিন তাদের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। এমনকি, একসময় বিরোধী জোটের মুখ তথা কর্ণাটকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী NDA-তে নাম লিখিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়াও একদা মমতার সঙ্গী চন্দ্রবাবু নাইডুও বিজেপির দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, এবার লড়াই হবে শেয়ানে শেয়ানে। তবে সবথেকে বেশি যেটি সবার চোখে লাগছে, তা হলও I.N.D.I.A জোটের এক আঞ্চলিক দলের নেতার উত্থান।
সেই নেতা হলে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনিই কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। বর্তমানে এই অভিষেকের নেতৃত্বেই দিল্লি অভিযান করছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই অভিযানে দেশিউ রাজধানী দিল্লিতে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে গিয়েছে। এমনকি অভিষেককে প্রিজন ভ্যানেও তুলতে বাধ্য হয় পুলিশ। এবারের দিল্লি অভিযানে অভিষেককেই এগিয়ে দিয়েছিলেন দলের সুপ্রিমো তথা রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তিনি যে নিজের কর্মক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন, তা সাম্প্রতিক ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে।
বলে দিই, I.N.D.I.A জোট এখনো পর্যন্ত তাদের প্রধানমন্ত্রীর মুখ ঠিক করেনি। অনেকেই মনে করছেন যে, রাহুল গান্ধীকে মোদীর বিরুদ্ধে মুখ করা হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে দেশীয় রাজনীতিতে রাহুলের থেকেও বেশি চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছেন অভিষেক। তাহলে কী তাঁকেই মোদী বিরোধী মুখ করার চেষ্টায় মমতা? যদিও, এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি তৃণমূলের তরফ থেকে।
রাহুল গান্ধী জাতীয় নেতা হলেও, বর্তমানে বিজেপির প্রধান নিশানা অভিষেক, তা মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে অভিষেককে ED-র তলব বা তাঁর স্ত্রী সহ তাঁর গোটা পরিবারকে সমন পাঠানো, এমনটাই ইশারা করছে। অন্যদিকে, রাহুল এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের র্যাডারের বাইরে। ন্যাশানাল হেরাল্ড কেস এখন তিমিরে। বিজেপির রাজ্য নেতা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে এখন রাহুলের থেকে বেশি অভিষেকের বিরোধিতা শোনা যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক যে কতটা প্রাসঙ্গিক তাদের কাছে, এটাই তাঁর প্রমাণ।
এখন প্রশ্ন উঠছে এটাই যে, তাহলে কী I.N.D.I.A জোটে রাহুল বনাম অভিষেকের লড়াই দেখা যাবে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিরোধী শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই। অনেকেই আবার রাহুলকে তেমন পরিপক্ব মনে করেন না। তাই মমতা অভিষেককে মুখ হিসেবে প্রোজেক্ট করলে যে ভুল করবেন না, তা বলাই বাহুল্য।
সম্প্রতিকালে অভিষেকের মুখে যেভাবে বিজেপি বা মোদী বিরোধিতা দেখা গিয়েছে, তা I.N.D.I.A জোটের অন্য কোনও নেতা বা খোদ রাহুল গান্ধীর মধ্যে দেখা যায়নি। রাহুল ভারত জোড়ো যাত্রায় কিছুটা সফল হলেও, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে সফল নন। ওদিকে, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে তৃণমূলের বড় অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছেন অভিষেক। পঞ্চায়েত নির্বাচন ও ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে তাঁর কাঁধেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন দলনেত্রী। এবং তিনি সেই দায়িত্ব পালন করে দলকে বড় জয় এনেও দিয়েছেন। এখন এটাই দেখার বিষয় যে, I.N.D.I.A জোট অভিষেককে নিয়ে কী ভাবছে। কারণ, রাহুল পরিপক্ব না হলেও, জোটের সবথেকে বড় দল কংগ্রেস। তাই তাঁরা অভিষেককে মেনে নেবেন কী না, সেটাই প্রশ্ন।