অনাড়ম্বর জীবনযাপন, সাইকেলে চেপে ঘুরে বেড়ান গ্রামে! অথচ ইনিই মালিক ৭,০০০ কোটির কোম্পানির

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রতি বছর ভারতের (India) হাজার হাজার যুবক-যুবতী গুগল, মাইক্রোসফট কিংবা টেসলার মতো বড় কোম্পানিতে চাকরি করার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে যেতে চান। অনেকের এই ইচ্ছে পূরণও হয়। তবে, তাঁদের মধ্যে মাত্র কিছুজনই বিদেশে কাজ করার পর দেশে ফিরে এসে নতুন সফর শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন শ্রীধর ভেম্বু (Sridhar Vembu)।

১৯৬৮ সালে চেন্নাই থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরে টেনকাসি জেলার একটি ছোট গ্রাম মাথালামপারায়ে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীধর। তাঁর বাবা হাইকোর্টের স্টেনোগ্রাফার ছিলেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি আইআইটি মাদ্রাজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করে আমেরিকায় চলে যান। সেখানে শ্রীধর ১৯৮৯ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করেন।

Success Story Of Sridhar Vembu

আমেরিকায় চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন: তিনি আমেরিকার সান দিয়েগোতে অবস্থিত কোয়ালকম কোম্পানিতে দুই বছর কাজ করেন। যদিও, সেই চাকরি তাঁর পছন্দ না হওয়ায় তিনি চাকরি ছেড়ে ভারতে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৯৬ সালে সফটওয়্যার সেক্টরে অ্যাডভেন্ট নেট নামে একটি কোম্পানি চালু করেন শ্রীধর। তারপর ২০০০ সাল নাগাদ প্রযুক্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এরপর নতুন কিছু করার কথা ভাবেন তিনি। তারপরেই তিনি Zoho কর্পোরেশনের শুরু করেন। আজ Zoho-র বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৬ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে এবং এই কোম্পানিটি প্রায় ১২,০০০ জনের কর্মসংস্থান প্রদান করে।

এক কথায়, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে Zoho কর্পোরেশন একটি বড় নাম। এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও শ্রীধর ভেম্বু ৩.৮ বিলিয়ন সম্পদের অধিকারী হয়ে ফোর্বস ম্যাগাজিনের ধনী ভারতীয়দের তালিকায় ৪৮ তম স্থানে পৌঁছে যান। ২০২১ সালে ৭২ তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে Zoho কর্পোরেশন সহ তাঁর সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “পদ্মশ্রী” দিয়ে সম্মানিত করেছে।

“গ্রামে কর্মসংস্থান”: উল্লেখ্য যে, ভারতের গ্রামে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। বেশিরভাগ মানুষই চাকরি পেতে বা নিজের কাজ শুরু করতে গ্রাম থেকে শহরে এবং তারপর শহর থেকে বিদেশ যান। কিন্তু, শ্রীধর ভেম্বু এই প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি গ্রামেই কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। শ্রীধর তাঁর কোম্পানি Zoho নিজের গ্রাম মাথালামপারাই থেকে পরিচালনা শুরু করেন।

আরও পড়ুন: আর নেই চিন্তা! SBI-তে অ্যাকাউন্ট থাকলেই এবার রয়েছে বড় সুখবর, শুরু হয়ে গেল এই দুর্দান্ত পরিষেবা

এমতাবস্থায়, Zoho কোম্পানির সদর দপ্তর চেন্নাইতে হলেও, মাথালামপারাইয়ে কোম্পানির একটি স্যাটেলাইট অফিস রয়েছে। মূলত, শ্রীধর তাঁর কর্মচারীদের তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি কাজ দেওয়ার জন্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য এই সব করেছিলেন। আজ তিনি মাথালামপাড়ায় প্রায় ৫০০ জন গ্রামবাসীকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন। তিনি নিজেই গ্রামের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁর কোম্পানিতে চাকরি দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর! মিসেলেনিয়াস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করল WBPSC, এভাবে করুন আবেদন

দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে পড়ান: জানিয়ে রাখি যে, শ্রীধর আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সাইকেলে চড়ে মাথালামপারাই গ্রামের চারপাশে ঘুরে বেড়ান এবং শিশুদের পড়ান (বেশিরভাগ শ্রমিকের সন্তান)। তিনি জানান যে, শিশুদের শিক্ষা দেওয়া এখন তাঁর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পলক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এখন তিনি এটিকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। পাশাপাশি, শ্রীধর উচ্চ বিদ্যালয়ের এবং ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য Zoho স্কুল অফ লার্নিং চালু করেছেন।

Success Story Of Sridhar Vembu

এই প্রসঙ্গে শ্রীধর ভেম্বু জানিয়েছেন, “আমি মনে করি আমরা শত শত Zoho তৈরি করতে পারি। আমাদের দেশ প্রতিভায় পরিপূর্ণ। ভারতের জনগণের সম্ভাবনা বিবেচনা করে, Zoho-র আকার কমপক্ষে ১০০  গুণ বড় হওয়া উচিত।” তিনি বিশ্বাস করেন, “ভারতে এত প্রতিভা আছে যে আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হওয়া উচিত।”


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর