বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বীরভূমের খয়রাশোলে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ৩৪ মিনিটের লাইভে বিস্ফোরক বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা (Anupam Hazra)। বেশ কিছুদিন ধরে অনুপম ইস্যুতে উত্তপ্ত বঙ্গ বিজেপির অন্দর। আর বুধবার লাইভ করে দলের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটালেন বিজেপি নেতা (BJP Leader)। সেখানে বেশ কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন অনুপম। আঙ্গুল তোলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের দিকেও। যা নিয়ে তুঙ্গে শোরগোল।
বিজেপির অন্দরে এই ধরনের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ কার্যত নজিরবিহীন। লাইভের শুরুতেই অনুপম বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে এ রাজ্যে যারা অবহেলিত তথা কোনঠাসা বিজেপির কর্যকর্তা, যারা মোদীজি অন্ত প্রাণ সেই সমস্ত মানুষদের বিভিন্ন জেলাতে বসিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও রাজ্য অফিসের এসি ঘরে বসে থাকা টিয়া পাখিকে দিয়ে বলানো হবে আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু মাঝে-মাঝেই বিভিন্ন জেলায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানো হয়।”
গতকালের এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে অনুপম বলেন, “গতকালও দিলীপদার সামনে মগরা হাটায় বসে থাকা কর্যকর্তারা জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বিজেপির একটা বড় অংশকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বেশ কিছু মুখপাত্র রয়েছে। যাদের কাজই হল যারা রাজ্য বিজেপি যারা চালান তাদের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখা। ”
আরও পড়ুন: ‘অভিষেক কে? আমি জানি না!’, সাংবাদিকদের প্রশ্নে বেফাঁস জ্যোতিপ্ৰিয়, মুখ খুলে যা বললেন..
এরপর তিনি আরও বলেন, “যারা বলবেন এখন কেন বলছেন এতদিন কোথায় ছিলেন, তাদের জানিয়ে রাখি ২ বছর আমার ট্রিটমেন্ট চলছিল। যার কারণে দুবছর আমি শয্যাসায়ী ছিলাম। এই রোগের কোনও ওষুধ নেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও নাড্ডাজীর যত্নে ও তত্ত্বাবধানে আমি সেরে উঠেছি। তাই আবার ময়দানে নেমেছি। তবে আবার কাজে ফেরা যে রাজ্য বিজেপির দু-তিন জন নেতার এক সিন্ডিকেট, তাদের এত গায়ে লাগবে তা বুঝতে পারিনি।”
বিস্ফোরক দাবি করে অনুপম বলেন, “আমাকে রাজ্য অফিসের কোনও মিটিং এ ডাকা হয়না। বঞ্চিত বিজেপি কর্মীদের মধ্যে আমিও একজন। আমাকে কোনও প্রোগ্রামে ডাকা হয়না। হলেও এমন সময় মেসেজ বা কল করা হয় যাতে আমি না যেতে পারি। আর যদি মোদী বা নাড্ডাজি বা শাহজীর রাজ্যে কোনও প্রোগ্রাম হয় তাতেও আমি যাই না। কারণ গেলে দেখা যাবে আমার জন্য কোনও চেয়ারও রাখা হবে না।
লাইভে তিনি জানান, “বীরভূমের দুবারাজপুর বিধানসভার অন্তর্গত খয়রাশোলের একটা প্রোগ্রামে যাচ্ছি। সেখানে দুবারাজপুর বিধানসভার যিনি বিধায়ক মাননীয় অনুপ সাহা তিনি বীরভূম জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার ঘনিষ্ঠ। আর ধ্রুব সাহার রেপুটেশন নিয়ে আমি কিছু বলছি না। লোকাল বাসে যাতায়াত থেকে এত টাকার মালিক কিভাবে হয়েছে তাতে আর যাচ্ছি না। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এরা। বুঝতেই পারছেন এদের লবি কতটা শক্ত।”
তার সাফ কথা, “এইরকমই বোলপুর জেলার সভাপতি অষ্টম মণ্ডল। তিনি আবার সুকান্ত মজুমদারের খুব ঘনিষ্ঠ। তাই এদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এদের হাতেই আবার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় দেওয়া হয়েছে। এই অনুপ সাহা ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের সুপ্ত বাসনা অনুপকে যাতে বোলপুর লোকসভা থেকে যাতে টিকিট দেওয়া হয়। এই জন্যই এদের ব্যাথাটা এত বেশি আমায় নিয়ে।”
নেতার অভিযোগ, “আজ যখন অনুপ সাহার এলাকায় দলের বসে থাকা লোকজনকে নিয়ে প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছি তখন এত সমস্যা। রাজ্য সভাপতি আমাকে অনুরোধও করেছিলেন যাতে আমি তার ঘনিষ্ঠ অনুপ সাহার বিরোধিতা না করি। অনুপ সাহা ও ধ্রুব সাহার চাপে কোনঠাসা হয়ে থাকা কর্মীরা যখন চেয়েছিলেন তারা এক বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান করবেন আমি যাতে সেখানে আসি। আর এই আজ যখন আমি যাচ্ছি এমন ভাবে করা হচ্ছে যেন আমি সন্ত্রাসবাদী। যেই লজে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা সেই মালিককে থ্রেট দিয়ে বুকিং ক্যানসেলও করানো হয়।”
শেষে তিনি বার্তা দিয়েছি বলেন,” ঘরের শত্রু বিভীষণরা যতই বাধা দিক না কেন তৃতীয়বারের জন্য মোদীজিকে জেতাতে হবে। শাহজীর টার্গেট মত পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩৫ টা সিট দিতে হবে। রাজ্য বিজেপির তিনটে লোক মিলে কখনও পশ্চিমবঙ্গের ৩ কোটি বিজেপিকে হারাতে পারবে না। এবার পাল্টা তাদের কোনঠাসা করতে হবে।”