বাংলা হান্ট ডেস্ক : রাজ্যের বহু মানুষের ভরসার জায়গা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল SSKM। আর এবার সেখানে গিয়েই প্রাণ হারাতে হল হাওড়ার ৬৫ বছরের বৃদ্ধা আখলিম বেগমকে। পরিবারের অভিযোগ, বুকে ব্যাথার কারণে অসুস্থ বৃদ্ধাকে নিয়ে তারা পৌঁছেছিলেন এসএসকেএমের (IPGME&R and SSKM Hospital) কার্ডিওলোজি বিভাগে। তবে চিকিৎসা হওয়া তো দূরের কথা, খোলা আকাশের নীচেই তাঁকে কাটাতে হল পুরো ১৮ ঘণ্টা। অবশেষে শনিবার দুপুর নাগাদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি।
অথচ অবাক করা বিষয় হল, এই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগেই ভর্তি রয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujay Krishna Bhadra)। এবং একই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও (Jyotipriya Mallick)। আর সেখানেই কী না এই রোগিণী বেড অবধি পেলেননা। স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মৃতের পরিজনেরা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার সময় এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয় আখলিম বেগমকে। সেখানে জানানো হয়, অবস্থা গুরুতর এবং তাকে এখনই ভর্তি করতে হবে। সিট না থাকায় কার্ডিওলোজি বিভাগ থেকে তাদের পাঠানো হয় এমার্জেন্সি বিভাগে।
মৃতার পরিবারের অভিযোগ, এমার্জেন্সি বিভাগের স্পষ্ট বার্তা, তারা কিছুই করতে পারবেনানা। এরপর এভাবেই কার্ডিওলজি এবং এমার্জেন্সি বিভাগের মধ্যে ছোটাছুটি করতে করতেই কেটে যায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত। এরপর তাদের পাঠানো হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন, রেফার সংক্রান্ত গাইডলাইনও কি মানল না এসএসকেএম? তবে সুরাহা মেলেনা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজেও। সেখান থেকে এসএসকেএমে ফিরে এসে শুক্রবার গোটা রাত শনিবার দুপুর দুটো পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরেই বসে থাকেন তারা।
আরও পড়ুন : ‘সরকার ভুল করলে প্রায়শ্চিত্ত হবে’, ধরনা মঞ্চে মুখোমুখি কুণাল-কৌস্তভ, তুমুল বচসা, উড়ে এল জুতো
সারা রাত খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকার পর শনিবার দুপুর ২ টো নাগাদ আচমকাই খিঁচুনি শুরু হয় বৃদ্ধার। ছেলেরা পাঞ্জাকোলা করে কার্ডিওলোজি বিভাগের দিকে ছুটলে তখনও নাকি বলা হয়, এখন ডাক্তার নেই। এরপর জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে যখন তিনি পাঞ্জা লড়ছেন, তখন আইসিইউ-তে বেড জোটে আখলিমার। তবে ততক্ষণে তার প্রাণবায়ু জবাব দিয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই চোখের সামনে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, জ্যোতিপ্রিয়রা যখন উদাহরণ তখন প্রশ্ন উঠছে স্বনামধন্য হাসপাতাল এসএসকেএমের পরিষেবার উপর।
আরও পড়ুনঃ ফের শুট আউট বাংলায়, বাড়িতে ঢুকে মারধর স্ত্রীকে! গুলিতে ঝাঁঝরা ব্যবসায়ী
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বদান্যতায় আদালতের নির্দেশিকায় পর্যন্ত এসএসকেএমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সদ্যই অভিযোগ উঠেছিল, শিশুদের জন্য বরাদ্দ বেডে রাখা হয়েছে কালীঘাটের কাকুকে। আর সেখানে কী না এই রোগিনী একটা সাধারণ বেড অবধি পেলেননা। মাকে হারিয়ে ছেলে তো স্পষ্টই বললেন, ‘দালালে ভরে গিয়েছে। যে টাকা দিতে পারবে সে সিট পাবে। টাকা দিয়ে লাইন বিক্রি হচ্ছে, বেড বিক্রি হচ্ছে।’ এদিকে চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটার কথায়, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপে সাধারণ মানুষেরা প্রাণ হারাচ্ছেন। যদি এটাই সত্যি হয় তাহলে এর শেষ কোথায়? প্রশ্ন রাজ্যের আমি জনতার।