বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে মেডিকেলে ভর্তি মামলার শুনানিতে তুলকালাম কলকাতা হাইকোর্টে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় সিবিআই (CBI) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)। এদিন ফের সেই মামলা শুনানির জন্য ওঠে বিচারপতির এজলাসে। সেই সময়ই শোরগোল বেঁধে যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত (Advocate General Kishor Datta) বলেন, আপনার ব্যাপারে আমার কাছে একটি সুনির্দিষ্ট খবর রয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, কী খবর? উত্তরে রাজ্যের এজি বলেন, আপনি আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে প্রার্থী হতে চলেছেন।
ভরা এজলাসে সরাসরি বিচারপতিকে এই প্রশ্ন করায় রীতিমতো থ সকলে। এজির কথার উত্তরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “না, এ কথা ঠিক নয়।” তবে চুপ করে থাকেন নি বিচারপতিও। পাল্টা এজিকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আপনি কীভাবে অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়েছেন তা আমার জানা আছে। আগে তো একবার আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবার ফিরে এসেছেন।
এই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে মেডিকেলে ভর্তি মামলার শুনানিতে। রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে (MBBS Admision Scam) দুর্নীতি ইস্যুতে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। অভিযোগ, মেডিক্যালে সংরক্ষিত আসনে অসংরক্ষিত ছাত্র ভর্তি চলেছে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় সিবিআই (CBI) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আবার বিচারপতির সেই নির্দেশের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাতে বিচারপতি সৌমেন সেনের (Justice Soumen Sen) ডিভিশন বেঞ্চ মৌখিক স্থগিতাদেশ দিয়েছে বলে দাবি করেছে রাজ্য। যদিও তার পরেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইকে এফআইআর দায়ের করতে বলেন। আবার ডিভিশন বেঞ্চ সেই এফআইআর-ও খারিজ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এরপরই এদিন বিচারপতি সৌমেন সেনকে বিচারপতির পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি সেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলেও এদিন মন্তব্য করে বসেন বিচারপতি গাঙ্গুলি।
এদিন এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের নির্দেশনামায় লিখেছেন, বড়দিনের ছুটির আগে শেষ যে দিন আদালতের কাজ হয়, সেদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে হাইকোর্টে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে বিচারপতি সেন বিচারপতি সিনহাকে কিছুটা রাজনৈতিক নেতার মতো নির্দেশ দিয়ে বলেন, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যত রয়েছে। তাই তাকে বিরক্ত করা চলবে না না।
শুধু তাই নয়, বিচারপতি সিনহার বেঞ্চের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করার পাশাপাশি তার বেঞ্চে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যে ২টি মামলা রয়েছে তা খারিজ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান যে বিচারপতি সিনহাই তাকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মীদের পোয়া বারো! এই দিন একসাথে ৩টি লটারি লাগতে চলেছে, খুশিতে আত্মহারা সকলে
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই চিঠি দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। বিচারপতিও পদক্ষেপ করেছেন। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে অবগত করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, গতকাল তার রায়ের কপি না দেখেই তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বিচারপতি সেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, বিচারপতি সেন কী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছেন? নয়তো কিভাবে রায়ের কপি না দেখেই তিনি স্থগিতাদেশ জারি করলেন? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বিচারপতি সেন। ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া কেন শুরু হবে না সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। উল্টো দিক থেকে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেন, আপনিই বিচার ব্যবস্থার ক্ষতি করছেন।