বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে মেডিকেলে ভর্তি (MBBS Admision Scam) মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির সংঘাতের ঘটনা দেখেছে গোটা রাজ্য। ইতিমধ্যেই এমবিবিএসে ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা সরেছে সুপ্রিম কোর্টে। আর এবার এই ঘটনায় মুখ খুললেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম (Justice T. S. Sivagnanam · Chief Justice)। জানালেন, এই ঘটনায় তিনি অত্যন্ত লজ্জিত এবং দুঃখিত। পাশাপাশি যত দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায় সেই বিষয় দেখছেন বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি।
কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay) এবং ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনের (Justice Soumen Sen) নজিরবিহীন সংঘাত নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত। আইনের এই মন্দির থেকে এটা আশা করা যায় না।’’ মঙ্গলবার দুপুরে নিজের এই মন্তব্য করেন বিচারপতি শিবজ্ঞানম।
বিচারপতি আরও বলেন, “কলকাতা হাইকোর্ট দেশের ঐতিহ্যশালী হাই কোর্ট। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। চাইছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। আমরা এই সমস্যার সমাধান করার জন্য সব রকম চেষ্টা করছি।’’ সোমবার এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ জন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ এই বিষয়ে জানায়, এটা সম্পূর্ণই কলকাতা হাইকোর্টের বিষয়। কলকাতা উচ্চ আদালতের ব্যাপারে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের প্রশাসনিক অধিকার রয়েছে। কিছু পদক্ষেপ করার হলে তিনিই করবেন।
শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “সিঙ্গল এবং ডিভিশন বেঞ্চ নিয়ে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আমরা সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। কলকাতা হাই কোর্টের মর্যাদা যাতে কোনও ভাবেই ক্ষুন্ন না হয় সেই দিকে নজর রাখতে হবে। কোন বেঞ্চে কোন মামলা যাবে, তা ঠিক করবেন হাই কোর্টের প্রধান বিচাপতি।”
আরও পড়ুন: শুরুতেই হেরে ভূত ‘I.N.D.I.A’ জোট! চন্ডীগড়ে আপ-কংগ্রেসকে নাকানি-চোবানি খাওয়ালো BJP
প্রসঙ্গত, মেডিকেলে ভর্তি (MBBS Admision Scam) মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা নিজের হাতে নিয়েছে। আগামী ৩ সপ্তাহ পর সর্বোচ্চ আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানি। মামলার সব পার্টিকে আদালতে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
প্রসঙ্গত, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলা ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। রাজ্য পুলিশের ওপর ‘ভরসা’ না থাকায় এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর সেই নির্দেশের বিরোধিতা করে বিচারপতি সৌমেন সেনের (Justice Soumen Sen) ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের ওপর মৌখিক স্থগিতাদেশ জারি করে ডিভিশন বেঞ্চ। তবে লিখিত স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে পারেননি রাজ্যের আইনজীবী। এর পরই সিবিআইকে সমস্ত নথি নিয়ে তত্ক্ষণাত্ এফআইআর করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুরু হয় সংঘাত।
পরদিন বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! এমনকি বিচারপতি সেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি গাঙ্গুলি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেনকে বিচারপতির পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেয় সুপ্রিম কোর্ট।