বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) চলছিল রাজ্যের মেডিক্যাল দুর্নীতি মামলার শুনানি, সেখানেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Justice Abhijit Ganguly) নিয়ে নালিশ ঠুকলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। আগেই এই মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিষেক। সুপ্রিম কোর্টও সায় দিয়েছিল। গতকাল সেই মামলার শুনানিতেই সওয়াল-জবাব করতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান।
প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ খাড়া করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই নন, পাশাপাশি বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাস থেকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি সরানোর বিষয়েও সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন অভিষেক। এরপর রাজ্যের মেডিক্যাল মামলা সুপ্রিম কোর্টে গেলে তাতেও যুক্ত হওয়ার আবেদন জানান অভিষেক।
এদিন মামলার শুনানিতে অভিষেকের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সওয়াল করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার মক্কেলকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অমৃতা সিনহা আক্রমণ করছেন। তাদের ‘অযাচিত’ পর্যবেক্ষণে সামাজিক মাধ্যমে সাংসদের মানহানি হচ্ছে।
মেডিক্যাল মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি জানান, সংবাদমাধ্যমে পাঁচবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এ কথা শুনে প্রধান বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে মামলা অন্য বেঞ্চে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তো, তার পরও কী সমস্যা? এরপর অভিষেকের আইনজীবী বলেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তার পর সংবাদ মাধ্যমে আরও তিনটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে শুরু হয় মেডিক্যাল দুর্নীতি মামলার শুনানি। বিচারপতি সিবিআই এর নির্দেশ দিলে তার বিরোধীতা করে বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্চের দ্বারস্থ হন রাজ্যের আইনজীবি। তৎক্ষণাৎ বিচারপতি সেন সিবিআই তদন্তের ওপর স্থগিতদেশ দিলে বেনজির সংঘাত বাঁধে সেন ও গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে।
বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের নির্দেশনামায় লিখেছিলেন, বড়দিনের ছুটির আগে শেষ যে দিন আদালতের কাজ হয়, সেদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে হাইকোর্টে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়ে বিচারপতি সেন বিচারপতি সিনহাকে কিছুটা রাজনৈতিক নেতার মতো নির্দেশ দিয়ে বলেন, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যত রয়েছে। তাই তাকে বিরক্ত করা চলবে না না।
এখানেই শেষ নয়, বিচারপতি সিনহার বেঞ্চের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করার পাশাপাশি তার বেঞ্চে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যে ২টি মামলা রয়েছে তা খারিজ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান যে বিচারপতি সিনহাই তাকে এই বিষয়ে সবটা জানিয়েছেন। বিচারপতি সেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলেও এদিন মন্তব্য করেন বিচারপতি গাঙ্গুলি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেনকে বিচারপতির পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সেন বনাম বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইস্যুতে মেডিক্যাল মামলা নিজের হাতে নেয় সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন: ৫০ কেজি ঘি, ৫ কুইন্টাল বেল কাঠ! রয়েছে কেষ্টও! শনিতে যা হচ্ছে বীরভূমে… শুনলে আঁতকে উঠবেন
সেই বেঞ্চের কাছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন জানান। অভিষেকের অভিযোগ ছিল কোনও প্রসঙ্গ ছাড়াই তার নাম বার বার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আদালতের ভিতরে ও বাইরে টেনে আনছেন। তাই তিনি এব্যাপারে নিজের বক্তব্য আদালতের সামনে রাখতে চান। যদিও এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারী।