বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত (India) এবার আমেরিকা (America), রাশিয়া (Russia) ও চিনের (China) টপ ক্লাবে যোগদান করতে চলেছে। জানা গিয়েছে, মোদী সরকার বায়ুসেনার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি ও তার প্রোটোটাইপ তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি দেশীয় ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেমের জন্য একটি বিশাল সুযোগ উন্মুক্ত করবে এবং সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধে সুবিধা প্রদানও করবে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (CCS) বৃহস্পতিবার প্রকল্পটির ডেভেলপমেন্ট স্টেজ এবং প্রোটোটাইপ প্রোডাকশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আনুমানিক ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। জানিয়ে রাখি যে, ২০২৮ সালের মধ্যে অ্যাডভান্সড মাল্টিরোল ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) অর্থাৎ পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট ওড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতের লক্ষ্য রয়েছে।
সেনাবাহিনী পাবে পঞ্চম প্রজন্মের দেশীয় যুদ্ধবিমান: প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে থাকা সংস্থা অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ADA) অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) তৈরি করছে। এই যুদ্ধবিমানগুলি হবে পঞ্চম প্রজন্মের এবং সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে তৈরি। পাশাপাশি, এগুলি হবে ডাবল ইঞ্জিনের। বিমানগুলির ডিজাইন এমন হবে যে শত্রুর রাডার তা সহজে শনাক্ত করতে পারবে না। ইতিমধ্যেই এই বিমানের ডিজাইন প্রস্তুত। এমতাবস্থায়, প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। এখন দ্রুত এটির কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যায় এবং এটি দুই বছরের মধ্যে প্রস্তুত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
থাকবে দুর্দান্ত ফিচার্স: মূলত, নতুন জেটগুলিতে সর্বশেষ সামরিক প্রযুক্তি উপলব্ধ থাকবে। যার মধ্যে
স্টিলথ ফিচার, AI ইন্টিগ্রেশন, দূরপাল্লার এনগেজমেন্ট ক্ষমতা এবং আনম্যানড সিস্টেমের সাথে যৌথভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা। পরিকল্পনা অনুসারে, চার থেকে পাঁচটি প্রোটোটাইপ বিমান তৈরি করা হবে এবং তারপরে সিরিয়াল প্রোডাকশনের আগে পরীক্ষা এবং যাচাই করা হবে। এই জেটের জন্য চূড়ান্ত অর্ডার কয়েক লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
প্রাইভেট কোম্পানির মাধ্যমে ফাইটার প্লেন তৈরি করা হবে: উল্লেখ্য যে, ভারত বর্তমানে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং একটি বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশীদারিত্ব নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ উদ্দেশ্য যান (SPV) দ্বারা জেটের চূড়ান্ত উৎপাদন করা হবে।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড় দেশীয় কোম্পানি হয়ে ওঠার পথ পরিষ্কার: জানিয়ে রাখি, পশ্চিমী দেশগুলিতে, ডিফেন্সের সমস্ত কোম্পানি প্রাইভেট সেক্টরের। তাদের যখন প্রয়োজন হয়, তারা সরকারি ফান্ডিং পরিচালিত ল্যাব এবং প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা পায়। এমতাবস্থায়, মেগা প্রকল্পগুলির জন্য কল্পনা করা SPV মডেলটি একটি বিশাল ভারতীয় কোম্পানি তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এটি একটি বড় দায়িত্বও বহন করবে। কারণ তৈরি হওয়া বিমানগুলি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিষেবাতে থাকবে। এর জন্য কোম্পানিকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি, HAL ভবিষ্যতে AMCA উৎপাদন করতে চায় এমন যে কোনো বেসরকারি সংস্থাকে নাসিকে তার বিদ্যমান সুবিধাগুলি অফার করার পরিকল্পনা করেছে।
আরও পড়ুন: মহাসমারোহে গর্ভবতী গাভীর সাধ, পেটপুরে খেল গোটা তল্লাট! মহিলার কাজের প্রশংসা গোটা দেশে
উল্লেখ্য যে, AMCA প্রকল্প একটি দেশীয় ফাইটার জেট ইঞ্জিন প্রোগ্রামের জন্য ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথেও যুক্ত। ৪০ টি AMCA জেটের প্রাথমিক ব্যাচের পাশাপাশি প্রোটোটাইপগুলি GE 414 ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হবে। কিন্তু বর্তমানে কাজ চলছে যৌথভাবে 110 kn থ্রাস্ট সরবরাহ করতে সক্ষম আরও শক্তিশালী ইঞ্জিন বিকাশের লক্ষ্যে একটি বিদেশি অংশীদার নির্বাচন করার জন্য।
আরও পড়ুন: ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির ম্যাজিক! ২০৩১-এর মধ্যেই “উচ্চ-মধ্যবিত্তের দেশ” হিসেবে বিবেচিত হবে ভারত
যুদ্ধবিমানের প্রজন্ম কিভাবে নির্ধারণ করা হয়: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন পঞ্চম প্রজন্মের বিমান তৈরি করেছে। মূলত, সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির পরিবর্তন হয় এবং এইভাবে বিভিন্ন প্রজন্মের বিমান তৈরি হয়। ১৯৭০-৮০ সালের পর তৈরি করা যুদ্ধবিমানকে বলা হয় চতুর্থ প্রজন্মের বিমান। ২০০০ সালের শুরুতে নির্মিত বিমানগুলি পঞ্চম প্রজন্মের বিমান। যদি, চতুর্থ প্রজন্মের বিমানে নতুন কিছু প্রযুক্তি যোগ করে পরিবর্তন করা যায়, তাহলে সেটিকে ৪.৫ প্রজন্ম বলা হবে। বর্তমানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছে চতুর্থ প্রজন্মের এবং ৪.৫ প্রজন্মের বিমান রয়েছে।