বাংলা হান্ট ডেস্কঃ অভিনেত্রী থেকে নেত্রী হয়েছেন তিনি। দুই ভূমিকাতেই ব্যাপক সফল জুন মালিয়া (June Maliah)। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন। এবার তাঁকে লোকসভার টিকিট দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড় করানো হয়েছে জুনকে। বর্তমানে শ্যুটিং, প্রচার, এসব নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত তিনি। দম ফেলার ফুরসতটুকু নেই। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, একটা সময় এই জুনের জীবনই একপ্রকার থমকে গিয়েছিল। আর তাঁকে সেই পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছিল প্রথম স্বামী।
বেশ কয়েকবছর আগে একটি সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছিলেন জুন। সেই সময় বলেছিলেন, তারকা জুনকে অনেকেই চেনেন। তবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে অনেকেই জানেন না। সেদিন ব্যক্তিগত জীবনের ওপর থেকে খানিক পর্দা সরিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
শহর কলকাতার নামকরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী ছিলেন জুন দুবে। অভিনেত্রীর বাবা ছিলেন ব্যাঙ্কার। প্রচণ্ড রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিলেন তিনি। বন্ধুদের বাড়িতে অবধি যাওয়ার অনুমতি পেতেন না। যদি কোনও বন্ধুর বাড়ির যেতে হতো তাহলে আগে জানতে চাওয়া হতো সেই বন্ধুর দাদা কিংবা ভাই আছে কিনা। এমন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ের জীবন বদলে যায় দেরাদুনে মাসির বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার পর। জুন তখন হাই স্কুলের ছাত্রী। দেরাদুনে গিয়েই প্রথম দেখেন সঞ্জীব মালিয়াকে। আলাপ হয় দু’জনের। প্রথম দেখাতেই মন হারিয়েছিলেন অভিনেত্রী। যদিও সঞ্জীব তখন তাঁকে বিশেষ পাত্তা দেননি। তবে কয়েক বছর পর কলেজে পড়ার সময় ফের দেখা দু’জনে।
আরও পড়ুনঃ হিরণের মাথায় বাজ! গুরুতর অভিযোগ বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে, এবার কী হবে? শোরগোল বঙ্গে
মাথায় তেল, দু’টো বিনুনিওয়ালা জুনের চেহারা তখন অনেকটা বদলেছে। এবার জুনকে দেখে প্রেমে পড়ে যান সঞ্জীবও। খুব কম বয়সেই ভালোবেসে বিয়ে করেন তাঁরা। মাত্র ২০ বছর বয়সেই সাত পাকে বাঁধা পড়েন জুন। জুন দুবে থেকে হয়ে যান জুন মালিয়া। প্রথমে জুন-সঞ্জীবের সম্পর্ক মামতে চাননি জুনের বাড়ির লোক। তবে ছেলের বাড়ির আর্থিক স্বচ্ছলতা দেখে আর ‘না’ বলেননি।
বিয়ের দু’বছরের মাথাতেই জুনের কোল আলো করে আসে পুত্র শিবেন। এরপর জন্ম হয় কন্যা শিবাঙ্গিনীর। ধীরে ধীরে বাড়িকেন্দ্রিক জীবন হয়ে যায় তাঁর। অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘যে বয়সে আমার সব বান্ধবীরা আনন্দ করছিল, আমি তখন ডায়পার পাল্টাচ্ছিলাম এবং ফিডিং বোতল ধুচ্ছিলাম’। জুন বলেছিলেন, ‘আমি আমার প্রথম স্বামীর বিষয়ে বলছি বলে ভাববেন না যে আজ সম্পর্ক নেই তাই নিন্দা করছি। কিন্তু ও আমায় একেবারেই ওপরে উঠতে দিতে চাইতো না। আমার সাফল্য সহ্য করতে পারতো না। অভিনয়ে সাড়া পাচ্ছিলাম বলে নানান ভাবে আমায় বাধা দিত। কিন্তু আমি থামিনি। এরপর একটা সময় বাবার কাছে চলে আসি’।
জুন জানিয়েছিলেন, তিনি অভিনয় করবেন একথা শোনার পর সঞ্জীব বলেছিলেন, ‘ও তুমি পারবে না’। এই কথাটাই তাঁকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিত বলে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। এরপর একদিন সব ছেড়ে বাবার কাছে চলে আসেন তিনি। জুনের বাবার শরীরে তখন ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। মেয়েও বৈবাহিক জীবনে খুশি নয়। বাবার কথাতেই দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর কাছে চলে আসেন জুন। খাতাউ কলমে যদিও তখনও বিবাহিতা ছিলেন তিনি। সন্তানদের দায়িত্ব বাবা দিতে চাননি। সেই কারণে শিবেন এবং শিবাঙ্গিনী ছোট থেকেই জেনেছে তাঁদের কাছে তাঁদের মা-ই সব।
এরপর থেকে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে যাত্রা শুরু জুনের। এই সময়কালে প্রেমও এসেছে অভিনেত্রীর জীবনে। বহু বছর সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন দু’জনে। জুন বলেছিলেন, ‘আমার সন্তানরা যতদিন না বড় হচ্ছে, নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততদিন আমি বিয়ে নিয়ে ভাবব না’। সেই কথা মতোই, শিবেন এবং শিবাঙ্গিনী বড় হওয়ার পরেই সৌরভের হাত ধরে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করেন অভিনেত্রী।