বাংলা হান্ট ডেস্কঃ চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল (Ghatal) কেন্দ্রের দিকে নজর থাকবে অনেকের। একদিকে দেব, অন্যদিকে হিরণ চট্টোপাধ্যায়, টলিপাড়ার দুই নায়কের এই লড়াইয়ে কে বাজিমাত করল তা জানার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন অনেকেই। তবে তার আগেই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ঘটে গেল এক দারুণ ঘটনা। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর আদলে দাসপুরে (Daspur) একটি ব্রিজ বানিয়ে সাড়া ফেলে দিলেন গোপাল নামের এক প্রৌঢ়।
পরনে লুঙ্গি, শার্ট, পায়ে হাওয়াই চটি। নদীতে ডিঙি পারাপার করান গোপাল মল্লিক। রোজ ভালোই ভিড় হয়। বৃষ্টিবাদলের মরশুম এলে সেই ভিড়ের পরিমাণ আরও বাড়ে। আর সেই সময়ই তিনি উপলব্ধি করেন, দাসপুরে একটা সেতু কতটা জরুরি। যেমন ভাবা তেমন কাজ! সেতু তৈরির জন্য অল্প অল্প করে কষ্টার্জিত টাকা জমাতে শুরু করেছিলেন গোপাল। এবার ভোটের আবহে কড়কড়ে ২৪ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি আস্ত সেতু বানিয়ে ফেললেন তিনি।
ঘাটাল জুড়ে বর্তমানে প্রচার চালাচ্ছেন বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী দেব। কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন হিরণও। তবে তার মাঝেই প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দাসপুরে আস্ত সেতু তৈরি করে ফেললেন গোপাল। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই কাঁসাই নদীর ওপর সেতু বানালেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে পুজোর পর হইহই করে সেতুর উদ্বোধনও হয়ে গেল।
আরও পড়ুনঃ দেড় মাস বাড়ির বাইরে, হারিয়েছেন কথা বলার ক্ষমতা! ভোটের মধ্যে অসুস্থ মমতা! জানালেন নিজেই
ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ১ নং ব্লকের নিজাপুরের। গোপালের এই সেতু তৈরির ফলে সুরাহা হল রবিদাসপুর, নিজামপুর তিলন্দ, বালক রাউত, নন্দনপুর, গোবিন্দগর সহ প্রায় ১০-১৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের। দাসপুরের নিজামপুর এবং পার্বতীপুরের মধ্যে কাঁসাই নদী পারাপারের ভরসা ছিল বাঁশের সাঁকো। কিন্তু বর্ষাকাল এলেই তা জলের তোড়ে ভেঙে যেত। রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে অ্যাম্বুলেন্স আসার পরিস্থিতিও থাকতো না। প্রায় ৫-৬ কিমি ঘুরে আসতে হতো অ্যাম্বুলেন্সকে।
সেই সঙ্গেই চাষিদের ফলানো ফসল বাজারে নিয়ে যেতেও সমস্যা হতো। গ্রামবাসীদের যাতে এই কষ্ট আর না করতে হয়, সেই কারণেই এবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি সেতু তৈরি করলেন নিজামপুর নিবাসী গোপাল মল্লিক। বর্ষাকালে নদীতে পানার চাপের সমস্যার কথা মাথায় রেখে ব্রিজের মধ্যে প্রায় ৪২ ফুট পিলার ছাড়া। সেই অংশ যাতে পোক্ত হয়, সেই জন্য লোহার তারের টান। সব কিছু মিলিয়ে, দাসপুরের বুকে যেন অবিকল দ্বিতীয় হুগলি সেতু গড়ে উঠল।
গোপালের এই উদ্যোগে মুখে হাসি ফুটেছে গ্রামবাসীদের। অনেকেরই আবার প্রশ্ন, একজন গ্রামবাসী ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেতু বানিয়ে ফেলল, অথচ কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকার কেন পারল না? গ্রামবাসীদের তরফ থেকে একাধিকবার পাকা সেতুর আবেদন করা হয়েছে। তবে এবার গোপাল তাঁদের সেই আবেদন পূরণ করায় খুশি প্রত্যেকে।
এই প্রসঙ্গে গোপাল বলেন, ‘চোখের সামনে মানুষকে কষ্ট পেতে দেখেছি। নেতা, মন্ত্রীদের থেকে অনেক আশ্বাস শুনেছি। নিজেই নৌকা পারাপার করতাম। রোজ চোখের সামনে যা দেখেছি, এরপরেই ঠিক করি একটা সেতু বানাব’। গ্রামবাসীরা আবার বলছেন, ‘এমন মানুষ ঈশ্বরের দান! টাকা তো অনেকেরই থাকে, কিন্তু ভাবেন কতজন?’ এদিকে তৃণমূল এবং বিজেপি, উভয় পক্ষের নেতারাই মেনে নিয়েছেন এই সেতু হওয়ায় সাধারণ মানুষের সুরাহা হবে। ঘাটাল সংগঠনিক জেলা তৃণমূল নেতা কৌশিক কুলভি বলেন, ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজ হওয়ায় অনেক মানুষের উপকার হবে। প্রশাসনের তরফ থেকে যদি হতো তাহলে একটু সময় লাগতো’। স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রশান্ত বেরার মুখেও শোনা গিয়েছে একই সুর। সেই সঙ্গেই তিনি আবার তৃণমূলকেও বিঁধেছেন।