গৌরনাথ চক্রবর্ত্তী, পূর্ব বর্ধমান,১৫ মেঃ :পূর্ব-বর্ধমানের মঙলকোটের ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা মা একান্ন পীঠের অন্যতম একটি পীঠ। কথিত আছে, যোগাদ্যা মায়ের পুজোয় আগে নরবলি হতো। এখন ছাগ ও মোষ বলি দেওয়া হয়। এই পুজো ঘিরে আলাদা একটা নিয়ম -নীতি রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে সেইসব নিয়ম -নীতি রয়েছে।প্রাচীনকাল থেকে সেইসব নিয়ম-নীতি এখন সব মানা না হলেও নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে যোগ্যাদা মায়ের পুজো হয়।এই যোগাদ্যা মা সারাবছরই জলের ভেতরে থাকে।বছরে মাত্র ৫দিন দেবীকে জল থেকে তুলে মন্দিরে এনে পুজো করা হয়।আর বছরের বাকিদিনগুলিতে দেবী থাকেন মন্দির লাগোয়া ক্ষীর দিঘিতে।তাই পুজো ঘিরে উত্সাহ আর উদ্দীপনায় ভাসছে গোটা গ্রাম।
এই পুজো ঘিরে কথিত আছে, দেবী হলেন মা মহামায়ার অন্য এক রুপ।অবধূতা রামায়ণ অনুসারে মহামায়ার সেবক মহিরাবণ অবতার রাম ও লক্ষণকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তাদের পাতালে নিয়ে আসে।মহাকালীর সামনে তাদের বলি দিতে গেলে মহীরাবণকে লক্ষ্মণ বধ করেন।এরপর দেবী মহামায়া সহ সেবক হনুমান রাম ও লক্ষ্মণকে উদ্ধার করে তিন দিন ধরে লাগাতার পাতাল পথে ক্ষীরগ্রামে ওঠে।রাম ও লক্ষ্মণ এই রাঢ় অঞ্চলে থাকতে না পারলেও দেবী মহামায়া যোগাদ্যা হয়ে রাঢ় বঙ্গে অন্ত্যজ শ্রেণীর হাতে পূজিত হতে থাকেন।এছাড়াও শাস্ত্র মতে,এখানে সতীর আঙুলের অংশ পড়েছিল বলে উল্লেখ আছে।এই দেবী কালক্রমে ব্রাহ্মণদের দখলে চলে যান।কিন্তু অন্ত্যজরা এই দেবীবে ছাড়তে চান নি।লড়াই এ জিতে ব্রাহ্মণরা মন্দিরের দখল নেয়।তবে প্রাচীন প্রথা মেনে আজও মহাপুজোর আগের রাতে ডোম-চুয়ারি খেলা হয়।প্রথা মেনে ডোমেরা শরীর থেকে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে মহাপুজোর আয়োজন করেন।
শাস্ত্র মতে বৈশাখের ২৮ থেকে ৩০তারিখ অবধি দেবীর কোনো রান্না ভোগ হয় না।কারণ কথিত আছে ওই সময় দেবী হনুমানের মাথায় চেপে পাতাল পথে এখানে এসেছিলেন।এলাকার ৩২টি জাতির মিলনের এক অনন্য সামাজিক নজির এই যোগ্যাদা মায়ের পুজো।অষ্টাদশ শতকের তৃতীয় দশকে রাজা কীর্তিচাঁদ রায় প্রায় ৮বিঘা জমির উপর মন্দির তৈরি করেন।মন্দিরটি তিনটি স্তরে বিন্যাস করা।মূল মন্দিরে কোনো প্রকার মূর্তি থাকে না।সারাবছরই দেবী জলেই থাকে।বৈশাখী সংক্রান্তি দিনে জল থেকে যোগাদ্যা মাকে তোলা হয়।মহাপুজোর শেষে ভোর রাতে দেবীকে জলে রাখা হয়।তিনদিন পর আবার জল থেকে তুলে দেবীকে মন্দিরে এনে অভিষেক করা হয়।এভাবে বছরে কয়েকটা নির্দিষ্ট দিনে দেবীকে জল থেকে তুলে পুজোর রীতি আছে।
প্রতিবছরের ন্যায় আজ বুধবার দেবী যোগাদ্যা মাকে জল থেকে তুলে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে।যোগাদ্যা পুজোকে কেন্দ্র করে ক্ষীরগ্রামে একটি বড় মেলা বসেছে।লাখো লাখো মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ-প্রশাসনও যথেষ্ট তত্পর।রবিবার পর্যন্ত এই মেলা চলবে।