বাংলা হান্ট ডেস্ক: বাংলা চলচ্চিত্র জগতের দুই কিংবদন্তি তারকা হলেন সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee)। পরিচালনা এবং অভিনয় ছাড়াও এই দুই অভিনেতার মধ্যেই রয়েছে বিশেষ প্রতিভা। এবার চুপিসারেই কলকাতা শহরের বুকে থাকা এই দুই কিংবদন্তি তারকার স্মৃতি ধন্য বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে অফিস।
এখানে কথা হচ্ছে, দক্ষিণ কলকাতার ৩, লেক টেম্পল রোডের তিন তলা বাগান সমেত বাড়ি নিয়ে। একসময় এই বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন বাংলার স্বনামধন্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়। ওই বাড়িতে বেশ কয়েক বছর ভাড়া ছিলেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-ও। কিন্তু কালের নিয়মে হাত বদল হতে হতে সেই বাড়ির মালিকানা এখন চলে গিয়েছে কর্পোরেট সংস্থার হাতে।
বাগান ঘেরা তিনতলার এই বাড়িতে বসেই একসময় সত্যজিৎ রায়ের কলম থেকে বেরিয়েছিল বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা দুই গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা কিংবা প্রফেসর শঙ্কু। এখানেই শুটিং হয়েছিল ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সিনেমার বেশ কিছু দৃশ্যের। সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায়ের কথায় জানা যায় ১৯৬১ সালে ওই বাড়িতেই সন্দেশ পত্রিকার নবজন্ম হয়।
তিনি জানান এই বাড়িতে প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমার বেশ কিছু দৃশ্যের শুটিং হলেও তা পরে শেষ হয়েছিল তাদের বর্তমান বাড়িতে। স্থানীয় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে একসময় ‘গুপী গাইন’ সিনেমার গানের রিহার্সালের সময় সত্যজিৎ রায়ের এই ভাড়া বাড়িতেই এসেছিলেন অনুপ ঘোষাল। এই বাড়িতেই প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমার শুটিংয়ের জন্য এসেছিলেন অভিনেতা ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়।
সালটা ছিল ১৯৫৯। সেবছর এই বাড়ির মালিক বারীন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে ৩ লেক টেম্পেল রোডের বাড়ির তিন তলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। এই বাড়িতে তিনি ছিলেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। তারপর তিনি উঠে আসেন বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে। বর্তমানে সেখানেই সপরিবারে থাকেন সত্যজিত পুত্র সন্দীপ রায়।
আরও পড়ুন: ‘দিদি নম্বর ওয়ান’এর জীবনে বিরাট দুঃসংবাদ! কাছের মানুষকে হারিয়ে দিশেহারা রচনা
সত্যজিৎ রায়, এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরের বছর থেকেই সেখানে এসে ওঠেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ওই বাড়িতে ছিলেন ছিলেন ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। ওই একই বাড়ি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাড়া নেওয়ার প্রসঙ্গে সম্ভাব্য নেপথ্য কারণ জানিয়ে সন্দীপ রায় বলেছেন, ‘সৌমিত্র কাকুর আগের বাড়িটা খুব বড় ছিল না। তারপর যখন জানতে পারলেন যে আমরা চলে গেছি তখন তিনি বাবার কাছে ওই ফ্ল্যাটেই থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিষয়টা এইভাবেই এগোয়।’
তবে বাড়ি বিক্রি হওয়ার কথা শুনে হতাশ হয়ে শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে সন্দীপ রায় এদিন বলেছেন, ‘সে কী! কবে বিক্রি করা হল। ওই বাড়িতে তো আমার ছোটবেলার প্রচুর স্মৃতি।’ এরপরেই পুরনো দিনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন ,’ওই বাড়িতে ঠাকুমা, দিদা সবাই থেকেছেন। তিন তলায় থাকতাম বলে ছাদটা ছিল আমাদের উপরি পাওনা। মনে আছে, ছাদে জন্মদিন পালন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানও হত।’
তবে এখন যে আর কিছু করার নেই। তাই আফসোসের সুরেই সন্দীপ রায় এদিন বললেন, ‘একটু হলেও খারাপ লাগছে। কিন্তু এখন তো যা শুনছি, বুঝতে পারছি, অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। আর কিছু করার নেই।’ একই সুর সৌমিত্র-কন্যা পৌলোমী চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও। আনন্দবাজার অনলাইনে এদিন তিনিও বলেছেন, ‘এই খবরটা জানতাম না। ওখানে অফিস হবে! ভাবতে পারছি না।’