বাংলা হান্ট ডেস্ক: কর্নাটকের হিজাব বিতর্কের আঁচ এবার খাস কলকাতায় (Kolkata)। এক বেসরকারি আইন কলেজের (law College) অধ্যাপিকা (Proffesor) হিজাব (Hijab) দিয়ে মাথা ঢেকে কলেজে যাওয়ায় আপত্তি জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার প্রতিবাদে স্বেচ্ছায় ওই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ওই কলেজের অধ্যাপিকা সানজিদা কাদের। রামপুরহাটের মেয়ে সানজিদা টালিগঞ্জের অবস্থিত এলজিডি আইন কলেজে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে অধ্যাপনা করছেন।
রমজান মাস এসে পড়ায় সালোয়ার কামিজের সাথেই হিজাব পরে কলেজে গিয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই আপত্তি জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রথমে মৌখিকভাবে নিষেধ করা হলেও পরে গত ৩১ মে পোশাক বিধি জারি করে সানজিদার হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তখন বাধ্য হয়ে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন ওই অধ্যাপিকা।
এরপর গত ৫ জুন পদত্যাগ পত্রে সানজিদা লিখেছিলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষের হিজাব বিরোধী নীতির জন্যই আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ হিজাব খুলতে বলা হলে তা আমার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করছে।’ সেই সাথে ওই অধ্যাপিকা আরও জানান, ‘একজনকে জোর করে হিজাব পরতে বাধ্য করা যেমন অপরাধ তেমনি জোর করে হিজাব খুলতে বাধ্য করা সমান অপরাধ।’
এ বিষয়ে ওই কলেজের চেয়ারম্যান গোপাল দাস আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘আমাদের ড্রেস কোডে ধর্মীয় কিছু পরা যাবে না।’ তখন তাকে প্রশ্ন করা হয় তাহলে শিখ ধর্মাবলম্বী কারও পাগড়ির ক্ষেত্রে কি হবে? তখন তিনি বলেন, ‘পাগড়িতে সমস্যা নেই’। কিন্তু হিজাব নিয়ে এমন বৈষম্যের কারণ কি? তার সদর উত্তর এব্যাপারে যদিও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত এই হিজাব বিতর্ক ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষের এবং সানজিদার মধ্যে অন্য কোন বিরোধের ঘটনা সামনে আসেনি।
আরও পড়ুন: IIT খড়গপুরে নতুন ইতিহাস! ৭৩ বছরে প্রথম মহিলা ডেপুটি ডিরেক্টর, চিনে নিন অধ্যাপিকা রিন্টুকে
কলেজ কর্তৃপক্ষও শিক্ষিকা হিসাবে সানজিদার কোন রকম অযোগ্যতার কথাও বলেনি। তবে এই হিজাব বিতর্ক প্রসঙ্গে সানজিদা স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমি বোরখাও পরি না। শাড়ি চুরিদারের উপরে মাথা ঢাকা দিয়ে একটি কাপড় জড়িয়ে নিই। এ দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ তাই তো সবাইকে নিজস্ব ধর্মীয় বিধি পালন করার অধিকার দিয়েছে।’ এই খবর কানে আসতেই ওই শিক্ষিকার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন তৃণমূলের দেবরার বিধায়ক তথা প্রাক্তন আইপিএস অফিসার হুমায়ুন কবীর।
তিনি ওই ল কলেজের পরিচালন কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সানজিদাকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। তাতে সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আমরাও চাই না ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি হোক। আমরা চাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ভালোবেসে একসাথে থাকতে। তাই আমরা ওড়নার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। সেটি তিনি মাথায় জড়িয়ে হিজাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। মঙ্গলবার এই ল কলেজে সানজিদার যোগদান করার কথা ছিল।কিন্তু তিনি আদৌ আর শিক্ষিকা হিসাবে ওই কলেজের যোগ দেবেন কিনা তা তিনি এখনও স্পষ্ট করে জানাননি।