পল মৈত্র,দক্ষিন দিনাজপুরঃ জামাইষষ্ঠী একটি লোকায়ত প্রথা। ষষ্ঠীদেবীর পার্বণ থেকে এ প্রথার উদ্ভব। বৈদিক সমাজ থেকেই জামাইষষ্ঠী পালন হয়ে আসছে। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে প্রথম প্রহরে ষষ্ঠীদেবীর পূজার আয়োজন করা হয়। দেবী ষষ্ঠীর প্রতিমা কিংবা আঁকা ছবিকে পূজা নিবেদন করা হয়। কেউ কেউ ঘট স্থাপন করেও এই পূজা করে থাকেন। ষষ্ঠীদেবী দ্বিভুজা, দুনয়না, গৌরবর্ণা, দিব্যবসনা, সর্বসুলক্ষণা ও জগদ্ধাত্রী শুভপ্রদা। তিনি মাতৃত্বের প্রতীক। বিড়াল তাঁর বাহন। ষষ্ঠীপূজার উদ্দেশ্য সন্তানের কল্যাণ ও সংসারের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা।
পূজার সময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য পৃথক মালসার মধ্যে নতুন বস্ত্র, ফলফলাদি, পান-সুপারি, ধান-দূর্বা ও তালের পাখা রাখা হয়। ভক্তরা উপোস রেখে মায়ের পূজা করেন। মালসা থেকে নতুন বস্ত্র পরিধান করে ফলফলাদি খেতে হয়।
কথিত আছে, জনৈক গৃহবধূ স্বামীগৃহে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে বারবার বিড়ালের ওপর দোষ দিয়ে আসছিল। একদিন তার সন্তান হারিয়ে গেলে পাপের ফল ভেবে সন্তান ফিরে পাওয়ার জন্য সে বনে গিয়ে দেবী ষষ্ঠীর আরাধনা শুরু করে। গৃহবধূর আরাধনায় দেবী সন্তুষ্ট হলে সে বনে সন্তান ফিরে পায়। এ কারণে ষষ্ঠীদেবীর অন্য নাম অরণ্যষষ্ঠী। এদিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার অপরাধে গৃহবধূর শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে ওই গৃহবধূর মা-বাবা তাঁদের সন্তানের মুখ দেখা থেকে বঞ্চিত হন।
তাই মেয়েকে দেখতে উন্মুখ মা-বাবা একবার ষষ্ঠীপূজার দিন শ্বশুরবাড়িতে আসার জন্য জামাইকে সাদরে নিমন্ত্রণ জানান। জামাইষষ্ঠী পূজার দিন শ্বশুরবাড়িতে সস্ত্রীক উপস্থিত হলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
ষষ্ঠীপূজা রূপান্তরিত হয় জামাইষষ্ঠীতে। বাঙালি হিন্দুসমাজে এ উৎসবের সামাজিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
বিশেষ করে যে পরিবারে সদ্যোবিবাহিতা কন্যা আছে, সে পরিবারে এ পার্বণটি ঘটা করে পালন করা হয়। আর জামাই বাবারা কব্জি ডুবিয়ে মাছ-মাংস-দই-মিষ্টি পরম তৃপ্তি সহকারে খেতে ব্যাস্ত থাকেন।