অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট! কাস্টিং কাউচ নিয়ে এবার বিস্ফোরক ‘ধর্ষক’ বিপ্লব চ্যাটার্জি, শোনালেন মানসিক যন্ত্রণার কথা

বাংলা হান্ট ডেস্ক : নব্বইয়ের দশকের বাংলা সিনেমার ভিলেন মানেই ছিলেন একজন, তিনি হলেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (Biplab Chatterjee)। তাঁর  গা জ্বালানো অভিনয় থেকে সংলাপ দেখে রক্ত গরম হয়ে উঠত দর্শকদেরও। তখনকার দিনের বাংলা সিনেমার নায়িকাদের কখনও  ব্লাউজ ছিঁড়ে তো কখনও টোন-টিটকিরি মেরে কিংবা শ্লীলতাহানি কিংবা ধর্ষণ করতে দেখা গিয়েছে এই বর্ষিয়ান অভিনেতাকে (Biplab Chatterjee)। কিন্তু সিনেমার পর্দায় একজন ধর্ষকের চরিত্র  ফুটিয়ে তোলা ঠিক কতটা কঠিন?

ধর্ষকের চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা শোনালেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (Biplab Chatterjee)

তার জন্য কি ধরনের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে একজন অভিনেতাকে? সম্প্রতি এ প্রসঙ্গেই  টিভি নাইন বাংলায় মুখ খুলে ছিলেন বাংলা সিনেমার এক কালের ‘ভিলেন ধর্ষক’ বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (Biplab Chatterjee)। পর্দায় একজন খলনায়ক কিংবা ধর্ষকের চরিত্রে অভিনয়টা তখনই সফল হয়ে ওঠে যখন তাঁকে দেখে দর্শকদের সত্যিকারেই রাগ-ঘৃণা কাজ করে। এদিক দিয়ে  কিন্তু একেবারে সফল অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (Biplab Chatterjee)।

   

কিন্তু এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা তো মুখের কথা নয়! এ প্রসঙ্গে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (Biplab Chatterjee) বলেছেন,’বড় দায়িত্ব। অনেক বড় বিশ্বাসের বিষয়।’ একবার মুম্বাইতে এমনই এক চরিত্রে অভিনয় করার পর তাঁর প্রশংসা করে  এক সহ অভিনেত্রী তাঁকে বলেছিলেন, ‘এই একটা মানুষকে দেখলাম, যিনি পুরো অভিনয়টাই করলেন কিন্তু আমার শরীর স্পর্শ করলেন না। তাই বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় মনে করেন কারও সৎ ইচ্ছা থাকলে এই কাজটা বিশ্বাসের সাথেই করা যায়।’ কিন্তু যদি কারও উদ্দেশ্যই থাকে সহ অভিনেত্রীকে অস্বস্তিতে ফেলবেন তাহলে তিনি বদমায়শি করে এমনটা করতেই পারেন।

প্রসঙ্গত এখনকার দিনে বেশিরভাগ সিনেমায় এই ধরনের দৃশ্যের জন্য ডামি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তখনকার দিনে সেই সুযোগ ছিল না। এই ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করার আগে ঠিক কি ধরনের অস্বস্তি কাজ করতো? জানতে চাওয়া হলে হল বাংলা সিনেমার অঘোষিত ‘খলনায়ক’ এদিন জানিয়েছেন, ‘যাতে দর্শকদের রক্ত গরম হয়, রাগ হয় এভাবেই কাজটা করতাম।’ দিনের পর দিন পর্দায় কখনও শীলতাহানি করেছেন, আবার কখনও অভিনয় করেছেন ধর্ষকের ভূমিকায়। কিন্তু তারপরেও বারবার সহ অভিনেত্রীদের থেকে বিশ্বাস-ভরসা পেয়েছেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন : মায়ের থেকেই এই স্বভাব পেয়েছে! সবার সামনে কোয়েলের বড় অভ্যাস ফাঁস করলেন রঞ্জিত মল্লিক

এ প্রসঙ্গে দেবশ্রী রায়ের সাথে করা একটা সিনেমার দৃশ্যের কথা জানিয়ে অভিনেতা বলেছেন, একবার একটি সিনেমা দৃশ্যে দেবশ্রী রায়ের ব্লাউজ চেনার পাঠ ছিল তাঁর। কিন্তু সিনেমার স্ক্রিপ্ট পড়েই  দেবশ্রী রায়কে তিনি বলেছিলেন, ‘বাবা, আমি তোমার তোর সঙ্গে এই পাঠটা করব?’ শুনে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘আমি তো ভরসা পাচ্ছি তুমি আছো বলেই।’ এদিন এমনই নানান ঘটনার উদাহরণ দিয়েছেন অভিনেতা।

তবে পর্দায় তিনি অভিনয়টা নিখুঁত ভাবে করলেও বাস্তব জীবনে রাস্তাঘাটে জুটতো দর্শকদের থেকে চরম অপমান। বাচ্চারা তাঁকে  দেখে ছুটে আসলেও, মায়েরা তাঁকে দেখিয়ে বলতেন, ‘যাস না, লোকটা ভীষণ বদমাশ’। এগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও একজন অভিনেতার কাছে এটাই পরম প্রাপ্তি। কিন্তু একজন ধর্ষকের চরিত্রে অভিনয় করাটাও কম কষ্টের নয়। যার জন্য ভয়ানক মানসিক যন্ত্রণার মধ্যেও কেটেছে অভিনেতার।

Biplab 3

সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এদিন সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছেন, ‘অনেক সময় কোন অপরিচিত অভিনেত্রী চলে আসলে তাঁর সঙ্গে এমন দৃশ্যে অভিনয় করতে খুব অস্বস্তি হতো। আমি কেঁদে ফেলতাম। এমন অনেক দৃশ্য রয়েছে, যেগুলোতে শুট করে আমি পিছনে গিয়ে হাউহাউ করে কেঁদেছি। এছাড়াও এখনকার ইন্ডাস্ট্রির কাস্টিং কাউচ নিয়েও মুখ খুললেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘একজন ধর্ষকের চরিত্রে অভিনয় করার মধ্যে থাকে অসম্ভব কষ্ট। সেই মানসিক যন্ত্রণা বলে বোঝানো যায় না। কারণ এই কাজ করার জন্য তো আমি জন্মাইনি। কিন্তু করতে হয়েছে পেটের দায়ে। আর তখন এইসব কাস্টিং কাউচ ছিল না। তবে হতে পারে অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। খানিকটা রাজনীতির মত।  তাই কারোর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।’ 

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর