সত্যিই গয়না পরে, ভোজন সেরে রাত জেগে নাচ দেখেন মা দুর্গা? চমকে দেবে ৩ বনেদি বাড়ির পুজোর  ইতিহাস

বাংলা হান্ট ডেস্ক : দুর্গাপুজো (Durga Pujo) মানেই বাঙালির কাছে আবেগের আরেক নাম। সারা বছর পুজোর এই দিনগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকেন গোটা রাজ্যবাসী। বাঙালি মানেই বারো মাসে তেরো পার্বণ ঠিকই কিন্তু, বছর বছর দুর্গাপুজোকে (Durga Pujo) ঘিরে প্রত্যেক বাঙালির মধ্যেই থাকে এক আলাদাই উন্মাদনা। তবে শহর কলকাতার এখনকার দিনের পুজোর সাথে আগের পুজোর (Durga Pujo মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

কলকাতার ৩  বিখ্যাত বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Pujo)

নিত্য নতুন থিমের ভিড়ে এখন একপ্রকার হারিয়ে গিয়েছে সাবেকি দুর্গাপুজো (Durga Pujo। তবে একথা ঠিক কলকাতার দুর্গাপুজো (Durga Pujo) মানে আজও প্রথমেই উঠে আসে বনেদী বাড়ির দুর্গা পুজো (Durga Pujo)। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক বনাদি বাড়িতে আজও দুর্গাপুজো হয় ঠিকই কিন্তু শহর কলকাতায় এমনও তিনটি বনেদি বাড়ির  দুর্গাপুজো আছে যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে এক পুরনো প্রবাদ। দুর্গাপুজো ঘিরে তৈরি হওয়া এই তিন প্রবাদ অনুযায়ী পুজোর সময় মর্ত্যে আগমনের পর মা প্রথমে গয়না পড়তে যান উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোর শিবকৃ্ষ্ণ দাঁর বাড়িতে। কিন্তু সত্যিই কি তাই?

   
  • শিবকৃ্ষ্ণ দাঁর বাড়ির দুর্গাপুজো

আসলে তখনকার দিনে উত্তর কলকাতার নামি ব্যবসায়ী গোকুলচন্দ্র দাঁ-র দত্তক পুত্র শিবকৃ্ষ্ণও সেসময় পারিবারিক ব্যবসায় ভালো লাভ করেছিলেন। ফুলে ফেঁপে উঠেছিল তাঁদের  ধন-সম্পত্তি। তাই সেই লাভের টাকায় একটা বড় অংশ দিয়ে তিনি ধুমধাম করে দুর্গাপুজা করেছিলেন। নিজের সাজ পোশাকের পাশাপাশি মায়ের সাজশয্যার জন্যও  সুদূর প্যারিস এবং জার্মানি থেকে হিরে আর চুনি বসানো গয়না বানিয়ে এনেছিলেন শিবকৃষ্ণ। আজও ওই গয়না দিয়েই সাজিয়ে তোলা হয় দেবী প্রতিমাকে। সেই থেকেই প্রবাদ তৈরী হয় ‘দেবী মর্ত্যে এসে গয়না পরেন জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের বাড়িতে’। এছাড়াও এই বাড়ির দুর্গা পুজোর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ‘কলাবউ-এর ছাতা’। এবছর এই বাড়িতে ১৮৪ তম দুর্গাপুজো হচ্ছে।

Pujo 2

  • কুমোরটুলির মিত্র বাড়ির দুর্গাপুজো

প্রত্যেক বছরের দুর্গা পুজোয় উত্তর কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে থাকে কুমোরটুলির দুর্গাপুজো।  এই কুমোরটুলি তেই প্রত্যেক বছর ধুম ধুম করে পালিত হয় অভয়চরণ মিত্রের বাড়ি দুর্গাপুজো। যা মিত্র বাড়ির দুর্গাপুজো নামেও পরিচিত। এই বাড়ির সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহু প্রাচীন ঐতিহ্য এবং কিংবদন্তি। তাই আজও বাংলার প্রচলিত প্রবাদ অনুসারে বিশ্বাস করা হয় জোড়াসাঁকোর শিবকৃ্ষ্ণ দাঁর বাড়িতে এসে গয়না পরার পর কুমোরটুলির এই মিত্র বাড়িতে এসেই ভোজন করেন মা দুর্গা।

Puja 1

ঐতিহ্যবাহী মিত্র পরিবারের প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন এই পরিবারের আদি পুরুষ গোবিন্দরাম মিত্র। তবে এই পুজোর জৌলুস বাড়ে উত্তর পুরুষ অভয়চরণ মিত্রের হাত ধরেই। মিত্র বাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে নানা রকম সোনার গয়নায় সাজানো হয় সেই প্রাচীনকাল থেকে। এই বাড়ির  প্রতিমাকে অন্ন  ভোগ দেওয়ার নিয়ম নেই। পরিবর্তে তাঁকে  নিবেদন করা হয় ৩০ থেকে ৫০ মণ  চালের নৈবেদ্য। এছাড়াও থাকে নানা রকম মিষ্টি, গজা, নিমকি,লুচি, রাধাবল্লভীর ইত্যাদি খাবার। এখানকার পুজোর অন্যতম আকর্ষণ অষ্টমীর কুমারী পুজো। তবে বলিপ্রথা এখানে  সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তবে  অনেকেই হয়তো জানেন না, এই মিত্র পরিবারের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য এখানকার আদিপুরুষরা যে ঘাট  বানিয়েছিলেন সেটাই এখন বাগবাজার ঘাট নামে পরিচিত।

  • শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো

উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ি দুর্গাপূজো গুলির মধ্যে অন্যতম হলো শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। এই পুজোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে ইংরেজ আমলের অনেক পুরনো ইতিহাস। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। ১৯৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার হারের পিছনে হাত  ছিল এই রাজা নবকৃষ্ণ দেব-এর।  ব্রিটিশদের সাহায্য করেই তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে। শোভাবাজার রাজবাড়ির এই দুর্গাপুজো এ বছর ২৬৮ বছরে পাদি দিতে চলেছে। সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করার পর নবকৃষ্ণ ইংরাজদের আস্থা ভাজন হয়ে ওঠেন।  সেই সাথে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন প্রচুর ধন-সম্পত্তি। সেই আনন্দে ওই বছর নিজের বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন নবকৃষ্ণ। 

Shovabazar

সেই বছর শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গোৎসবে জাঁকজমক থেকে শুরু করে বিলাসিতায় একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন নবকৃষ্ণ। দেবী দুর্গার বসার জন্য তৈরি করেছিলেন সোনার সিংহাসন। সেই থেকেই প্রথম শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজায় অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য বাইজি নাচের আয়োজন করা হয়েছিল। শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকেই প্রথম দুর্গাপুজোয় বাইজি নাচ শুরু হয়েছিল। টানা ১৫ দিন ধরে চলতো এই নাচ। তবে বাইরের লোকেদের এই নাচ দেখার জন্য জন্য ছিল একটি বিশেষ শর্ত। সে সময় আমন্ত্রণপত্র ছাড়া শোভাবাজার রাজবাড়িতে ঢোকা ছিল নিষেধ। আর  সেই থেকেই বাংলায় প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে পুজোর সময় মা দুর্গা রাত জেগে এই শোভা বাজার রাজবাড়ির নাচ দেখেন।

ad2
Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর