পেটের দায়ে করেছেন কুলির কাজ, নেননি কোনো টিউশন, মোবাইলে পড়েই শ্রীনাথ আজ IAS অফিসার

বাংলা হান্ট ডেস্ক : আইএস অফিসার শ্রীনাথের (Sreenath) সাফল্যের কাহিনী হার মানাবে সিনেমার গল্পকেও।  ইউপিএসসি (UPSC)! এটি কোনও সাধারণ পরীক্ষা নয়, বরং অগ্নিপরীক্ষা। ভারতের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা UPSC। গুগলে সার্চ করলেও এই একই উত্তর পাবেন। প্রতিবছর হাজার হাজার প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু শুধু পরীক্ষা দেবো বললেই তো হলো না তার জন্য প্রয়োজন প্রস্তুতির। আর প্রস্তুতির জন্য সবার আগে দরকার টিউশন, বিভিন্ন বইসহ একাধিক জিনিসপত্র।

IAS অফিসার শ্রীনাথের (Sreenath) সাফল্যের কাহিনী

তার জন্য অবশ্যই আপনাকে আর্থিক দিক থেকে সামর্থ্যবান হতে হবে। কিন্তু কেরালার শ্রীনাথ (Sreenath) যে অন্য কথা বলছেন। কোন টিউশন কিংবা নামিদামি বই ছাড়াই পাস করলেন ইউপিএসসি পরীক্ষা। পেটের দায় করেছেন কুলির কাজ। যে মাথা একসময় মালপত্র বহন করত, আজ তারই কাঁধে ভারত চালানোর গুরু দায়িত্ব। জানেন শ্রীনাথের (Sreenath) আইএস অফিসার হওয়ার সফল কাহিনী?

শ্রীনাথের কষ্টের জীবন:

কেরলের মুন্নার জেলায় জন্ম শ্রীনাথের, (Sreenath) আর সেখানেই বড় হয়ে ওঠা। কিন্তু একসময় কর্মসূত্রে তাকে চলে আসতে হয় এর্নাকুলামে। ছোট থেকেই অভাবের সাথে বড় হয়ে ওঠা শ্রীনাথের (Sreenath)। এই অভাব দূর করতে অল্প বয়সেই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। সংসারের অভাব দূর করতে এর্নাকুলাম স্টেশনে তিনি কুলির কাজ করতেন।

স্টেশনে আসা সাহেব বাবুদের ভারি ভারি মালপত্র বয়ে নিয়ে যেতেন তিনি। বাড়িতে উপার্জনকারী বলতে শুধুমাত্র শ্রীনাথই ছিলেন ভরসা। আর তাই তিনি দুটি শিফটে কাজ করে দিনশেষে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার করতেন। কিন্তু এতোটুকু টাকায় তাদের ঠিকমতো চলতো না সংসার।

আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন:

একেই সংসারে এমন অর্থের টানটান অবস্থা, তার মাঝেও শ্রীনাথ স্বপ্ন দেখতেন আইএএস অফিসার হবেন। তাই এত কষ্টের মাঝেও তিনি শুরু করেন ইউপিএসসির পড়াশোনা। পড়াশোনা করলেও পড়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ কিংবা বই কোনটাই ছিল না তার। তবে এই সময় তার জীবনে ভগবানের দূত হিসেবে আসে ফ্রি ওয়াইফাই। ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় ২০১৬ সালে সারাদেশের রেল স্টেশন গুলিতে প্রথম বিনামূল্যে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়।

আরও পড়ুন : সাবধান! সিঁদুর পরার সময় এই ভুল করলেই কমতে পারে স্বামীর আয়ু, তছনছ হয় দাম্পত্য জীবন

আর এই ফ্রি ওয়াইফাই শ্রীনাথের পড়ার যাবতীয় সুবিধা করে দেয়। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মোবাইলে সমস্ত স্টাডি মেটিরিয়াল ডাউনলোড করে পড়াশোনা করতেন তিনি। কোনও বই, নোটস, কোচিং ক্লাস, প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুধুমাত্র অনলাইন এবং অডিওবুক ডাউনলোড করে শ্রীনাথ পড়াশোনা করতে থাকেন। যদিও দিনের অর্ধেক সময় কুলির কাজ করতে করতে কেটে যেত তার। আর অবসর পেলেই বসে পড়তেন খাতা কলম নিয়ে।

নিজের স্বপ্নের পথে শ্রীনাথ:

জানা যায় ২০১৮ সালে KPSC অর্থাৎ কেরালা পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় বসেন। সেই পরীক্ষাতে উত্তীর্ণও হন তিনি। কিন্তু শ্রীনাথের স্বপ্ন অনেক বেশি। তাই তিনি এই পরীক্ষাতে পাস করে থেমে যাননি। ইউপিএসসি প্রিপারেশন নিয়ে প্রথমবার এই পরীক্ষায় বসেন। আর মেধাবী ছেলে প্রথম পরীক্ষাতেই অর্জন করেন চতুর্থ স্থান। আর এখন তার মাথায় দেশের বিরাট দায়িত্ব। এক সাক্ষাৎকারে শ্রীনাথ নিজেই বলেছিলেন, গুগল এবং ওয়াইফাই তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে।

Sreenath

শ্রীনাথের এই পরিশ্রম আজ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মনে ইচ্ছে থাকলে যে কোন কিছুই অনায়াসে জয় করা যায়। আর আইএএস বাবুর মনেও ছিল অদম্য জেদ, পরিশ্রম করার ক্ষমতা, সাথে ফ্রি ওয়াইফাই। এই তিন ব্রহ্মাস্ত্রই শ্রীনাথকে এতদূর নিয়ে এসেছে। মানুষ চাইলে কি না করতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ আমাদের শ্রীনাথ।

ad

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর