সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান গ্রামের বাসিন্দারা! মনের জোরে IAS অফিসার হয়ে তাক লাগালেন প্রিয়া রানি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: শাহরুখ খানের এই বিখ্যাত ডায়লগটি মনে আছে? “আগার কিসি চিজ কো দিল সে চাহো তো পুরি কায়নাত উসসে মিলানে কি কোসিস মে লাগ জাতি হ্যায়”। কিং খানের এই ডায়লগ একেবারেই সত্য। আর তার অন্যতম প্রমাণ হলেন বিহারের প্রিয়া রানি। মহিলারা ও যে পুরুষদের তুলনায় কোনও অংশে কম নন প্রমাণ করে দেখিয়েছেন তিনি। কোনও বাধা বিপত্তি প্রিয়ার সফলতা (Success Story) অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। একজন নারী হিসেবে কম গঞ্জনা শুনতে হয়নি তাঁকে। তবুও, সেই সমস্ত কিছু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছেন। আর আজ তিনি দেশের সফল IAS অফিসার। যাঁরা কথা শুনিয়েছিল আজ তাঁদেরই অহঙ্কার হয়েছেন তিনি।

প্রিয়া রানির IAS অফিসার (Success Story) হওয়ার গল্প:

বিহারের ফুলওয়ারি শরীফের কুরকুরি গ্রামের বাসিন্দা প্রিয়ারানি। সেখানেই বেড়ে ওঠা তাঁর। ছোটো থেকে তিনি পড়াশোনা খুব ভালোবাসতেন। চেয়েছিলেন এমন কিছু করতে যাতে দেশের জন্য ভালো হয়। কিন্তু তাঁর পড়াশোনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গ্রামের বাসিন্দারা। মেয়ে হয়ে এত পড়াশোনা করে কি লাভ? তার চেয়ে বাড়িতে থাকাই ভালো এমনই সব মন্তব্য শুনতে হয় প্রিয়া রানিকে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়েও তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে গোঁড়া মানসিকতার বিরুদ্ধে।

তবে, এতকিছুর মাঝে প্রিয়া রানির সাহস জোগানোর উৎস ছিলেন তাঁর ঠাকুরদা। গোটা গ্রামবাসী প্রিয়ার পড়াশোনার বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ালেও, ঠাকুরদা ঢাল হয়ে দাঁড়ান তাঁর সামনে। সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রিয়া জানিয়েছিলেন, ২০ বছর আগে পাটনায় পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন তাঁর ঠাকুরদা। সেই সময় গ্রামে মেয়েকে পড়ানো নিয়ে প্রবল বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। তবে তাঁর বাবা এবং ঠাকুরদা পিছিয়ে পড়েননি। সর্বদা মনোবল জুগিয়ে গিয়েছেন তাঁরা।

Success Story story of IAS Priya Rani.

পাটনা শহরে ভাড়ার ঘরে থাকতেন তিনি। সকলকে ছেড়ে একা একা অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েই পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেন প্রিয়া রানি। পড়াশোনার সম্পন্ন করার পরই তিনি UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। জানা গিয়েছে, প্রিয়া রানি মেসরার বিআইটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পড়াশোনা চলাকালীনই ক্যাম্পাস প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বেঙ্গালুরর একটি কোম্পানিতে ভালো চাকরি পেয়ে যান তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে UPSC-র প্রস্তুতির জন্য তিনি এই কাজ ছেড়ে দেন। দিনরাত শুধু UPSC-র জন্য পড়াশোনা করতে থাকেন। তবে, প্রথমবার এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হন। কিন্তু প্রথমবার ব্যর্থ হওয়াতেও তিনি ভেঙ্গে পড়েননি।

ফের আরও একবার IAS অফিসার হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। আর দ্বিতীয়বারে তিনি সফল (Success Story) হন। কিন্তু IAS অফিসার পদে নন, তিনি সিলেক্ট হন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে। তবে, প্রিয়া রানির মনে যে স্বপ্ন আইএএস অফিসার হওয়ার। তাই তিনি থেমে থাকেনি নি। বরং তৃতীয়বার ফের পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু এবারও সেই খালি হাতে ফিরে আসতে হয়।

আরও পড়ুন: আর নয় বিবাদ! লাদাখে LAC নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে মিটল বিরোধ, সামনে এল বড় আপডেট

এরপর চতুর্থবার পরিশ্রমের বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখেননি সেইবার। নিজেকে ঘরবন্দি করে নিয়ে অহরহ শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আর দিনশেষে সেই পরীক্ষায় জয় হয় তাঁর। চতুর্থবার UPSC পরীক্ষায় পাস করে ৬৯ র‍্যাঙ্ক অর্জন করেন বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামের এই মেয়েটি। একটি সাক্ষাৎকারে প্রিয়া রানি জানান, চাকরি পাওয়ার পরও ভোর চারটের সময় উঠে তিনি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতেন। কঠোর পরিশ্রমই আজ তাঁর সফলতার (Success Story) কারণ। প্রিয়া রানির মতে, শিক্ষাই জীবনের মূল সম্পদ।

আরও পড়ুন: বিড়লাকে হারিয়ে বাজিমাত করলেন আদানি! ৮,১০০ কোটি টাকায় কিনবেন এই কোম্পানি

শুনলে অবাক হবেন, যে মেয়েটিকে একদিন পড়াশোনার জন্য কোণঠাসা করে দিয়েছিল গ্রামবাসীরা, আজ সেই মেয়েটিকে নিয়েই বিহারের গ্রামের সকলে গর্বিত (Success Story)। আজ সকলে স্যালুট করেন প্রিয়া রানিকে। তবে, প্রিয়া রানি শুধু বিহারের নয়, বরং দেশের সমগ্র নারী সমাজের কাছে এক অন্যতম অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছেন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর