বাংলাহান্ট ডেস্ক : সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি জনপ্রিয় ‘বাবেশ’ নামে। তাঁর মেকআপ স্কিল টেক্কা দিতে পারে যেকোনো মেয়েকে। অভিনয় দক্ষতা, মুখের এক্সপ্রেশনে নামীদামী অভিনেতা অভিনেত্রীদেরও পেছনে ফেলে দিতে পারেন। নেটিজেনদের কথায়, পারফর্মার হিসেবে তিনি ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’। ‘লাফটারসেন’ ওরফে নিরঞ্জন মণ্ডল (Niranjan Mondal)। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ইউটিউব, ফেসবুকে যাঁরা সক্রিয় থাকেন তাঁরা প্রত্যেকেই কখনো না কখনো তাঁর ভিডিও দেখেছেন। নিজের ইউনিক কনটেন্ট এবং দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমেই বাংলা ইউটিউব কমিউনিটিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন লাফটারসেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ জনপ্রিয় নিরঞ্জন (Niranjan Mondal)
বর্তমানে অলিতে গলিতে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিড়ে নিজেকে আলাদা ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য কনটেন্টে দম চাই বস! আর সেটা ভরপুর মাত্রায় রয়েছে লাফটারসেনের মধ্যে। তাঁর প্রতিটি ভিডিওই হয় অন্যদের চেয়ে আলাদা। কখনো পিলে চমকানো ভূত সেজে, কখনো শাড়ি গয়না পরে মা, ঠাকুমা, বাড়ির বড় বউ, ছোট বউ সেজে ভিডিও বানান নিরঞ্জন (Niranjan Mondal)। এমনকি মশা, আরশোলা, ব্যাঙ এর মতো মনুষ্যেতর প্রাণীদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও তিনি এমন সব ভিডিও তৈরি করেন যা দেখে অবাক হয়ে যান সকলে।
আরো পড়ুন: এক ধাক্কায় এগোবে গল্প, ‘জগদ্ধাত্রী’র মেয়ে হয়ে আসছেন এই অভিনেত্রী! শেষ হচ্ছে সিরিয়াল?
নিজের স্ট্রাগল কাহিনি শোনান ইউটিউবার
মূলত কমেডি এবং হাসির মোড়কে সামাজিক বার্তা মূলক ভিডিওই বানিয়ে থাকেন লাফটারসেন। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের পেছনে যে কতটা স্ট্রাগল আর দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে রয়েছে তা জানেন না অনেকেই। একবার ‘জোশ টকস’ এর মঞ্চে এসে নিজের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন, যৌন পরিচয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন নিরঞ্জন (Niranjan Mondal)। দিয়েছিলেন কিছু সামাজিক বার্তা। তাঁর কথায়, আমাদের সমাজ একটা ছেলে আর মেয়েকে পর্যন্ত আজও একসঙ্গে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারে না। সেখানে দাঁড়িয়ে সমকামী সম্পর্ক গুলি তো আরো বড় ব্যাপার।
নিজেকে বুঝতে লেগেছিল সময়
নিজের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছিল নিরঞ্জনের (Niranjan Mondal)। ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ার সময় পাশের বাড়ির এক দাদার কাছে পড়তে যেতেন তিনি। কিছুদিন পর সেই দাদা তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। কিন্তু ছোট নিরঞ্জন তখন কিছু বুঝতেন না, শুধু বাড়ি এসে মনে হত জিনিসটা ঠিক হচ্ছে না। তবে একথা কাউকে বলেননি তিনি কখনো। একটু বড় হতে নিজের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের ব্যাপারে তিনি বুঝতে শুরু করেন। এদিকে তখন তাঁর বাবা মা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মানসিক ভাবে একা হয়ে যাওয়া নিরঞ্জন (Niranjan Mondal) একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর সেই ছেলেটিও বাড়ির চাপে বিয়ে করে নেয়।
এদিকে নিরঞ্জন (Niranjan Mondal) জানান, তাঁর বাবা মা তো আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। উপরন্তু তাঁর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের ব্যাপারে জানতে পেরে যাওয়ায় তাঁকে বাড়ি ছাড়তে হয়। কিছু সময় পর ইন্ডাস্ট্রির এক নামী মেকআপ আর্টিস্টের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান তিনি। ফের শুরু হয় তাঁর কনটেন্ট ক্রিয়েশন সফর। ভাইরাল হতে থাকে প্রতিটি ভিডিও। নিজের আশেপাশের ঘটনা থেকেই ভিডিও বানানোর অনুপ্রেরণা পান বলে জানান নিরঞ্জন। লাফটারসেন হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তা, ভালোবাসা পেয়েছেন ঠিকই। তবে তাঁর আক্ষেপ, সমাজকে তিনি এখনো বদলাতে পারেননি।