বাংলাহান্ট ডেস্ক: আপনাকে যদি দেশের সফল ব্যবসায়ীদের কথা জিজ্ঞেস করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের মাথায় আসবে মুকেশ আম্বানি, গৌতম আদানী, রতন টাটাদের নাম। এমনকি শুধু আমরাই নয় গোটা বিশ্ব জানে এদের নাম। এদের দৌলতে আজ ভারতীয় অর্থনীতি অনেকটাই মজবুত হয়ে পড়েছে। তবে আজ যাদেরকে এত বড় ব্যবসায়ী হিসেবে চিনছেন, একসময় এদের থেকেও বড় ব্যবসায়ী, বিত্তবান ব্যক্তি ছিল। যার এক ইশারাই যথেষ্ট ছিল সকলের জন্য। এনাকে মান্য করে চলতো ব্রিটিশরাও। শুনলে অবাক হবেন এই ব্যবসায়ীর কাছে টাকা ধার নিয়েছিলেন ঔরঙ্গজেব এবং শাহজাহানের মত সম্রাটরা। যে ব্যবসায়ীর কথা বলছি তিনি স্বাধীনতার আগের ব্যবসায়ী। এখন প্রশ্ন কে এই ব্যবসায়ী? কোথায় থাকতেন তিনি? দেখুন আজকের প্রতিবেদনে।
বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ীর দাপট:
ইনিই আর কেউ নন, দেশের বিখ্যাত ব্যবসায়ী বীরজি ভোরা। বীরজি বাবুর জন্ম ১৫৯০ সালে। তিনি ছিলেন মুঘল আমলের ব্যবসায়ী। ব্যবসা করা ছিল তাঁর নখদর্পণে। সেই সময় এই ব্যক্তিকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে গণ্য করা হতো। এমনকি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফ থেকেও তাকে বিত্তশালী ব্যবসায়ী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। মূলত বীরজি বাবু সেই সময় অবিভক্ত ভারতে পাইকারি ব্যবসা করতেন। শুধু তাই নয়, একই সাথে সুদের টাকা ধার দেওয়ার কারবার ছিল তাঁর। এই দুই কাজ করেই তিনি ব্যবসার জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।
জানা যায়, মূলত বীরজি বাবুর আধিপত্য বিস্তার ছিল সুরতে। সেখানেই যেসব পণ্য আমদানি করা হত ওখানে থেকেই সমস্ত জিনিস কিনে নিতেন। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে ছিল মশলা, প্রবাল, আফিম ইত্যাদি। এগুলো তিনি প্রথমে কম দামে কিনে নিতেন। এরপর সেগুলোই কিনে নিয়ে তিনি চড়া দামে বিক্রি করতেন। শোনা যায়, এতে করে বেশ লাভ হতো তাঁর।
ইংরেজদের সাথে করতেন ব্যবসা:
শুনলে অবাক হবেন, একসময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করতেন তিনি। শুধু কি তাই এতটাই বুদ্ধিমান ছিলেন যে আপনারা কল্পনাই করতে পারবেন না। জানা যায়, সুরতে ডাচদের থেকে মরিচ কিনতেন বীরজি। আর ইংরেজদের কাছ থেকে কিনতেন প্রবাল। একদিকে কিনে উল্টোদিকে আবার ইংরেজদের কাছে মরিচ, এলাচ, হলুদ বিক্রি করতেন। আর এই করে করে তিনি নিজের লক্ষ্মীর ভান্ডার ভালোভাবে ভরিয়ে নেন।
জানা যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং বীরজির ব্যবসায়িক দিক থেকে যেমনই সম্পর্ক থাকুক না কেন, এমনিতেই দু তরফের সম্পর্ক ছিল একেবারে খাঁটি। শোনা যায়, ১৬৬১ সাল থেকে ১৬৭০ সাল পর্যন্ত ইংরেজদের কাছে তিনি ছিলেন বড় ক্রেতা। শুধু তাই নয় ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা করার সময় চড়া হারে জিনিস কেনাবেচা করে বিপুল অর্থ উপার্জন করতেন বীরজি। একসময় তাদের সম্পর্ক এতটাই ভাল ছিল যে, বীরজী কোম্পানিকে দু লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন। বর্তমান যুগে যে টাকার মূল্য প্রায় কোটি টাকার কাছে। সেই জন্যই বলা হত, সেই সময় কারোর কাছে টাকা ধার না পেলেও একমাত্র এই ব্যবসায়ী বাবুর কাছে টাকা ঠিক ধার পাওয়া যেত।
শুধু ইংরেজদের সঙ্গেই নয় মুঘল সম্রাটদের সঙ্গেও ব্যবসায়ীর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। একসময়, ঔরঙ্গজেবকেও তিনি টাকা ধার দিয়েছিলেন। সেই সময় দাক্ষিণাত্য অঞ্চল লড়াইয়ের সময় আর্থিক সমস্যায় পড়ে যান সম্রাট। সে সময় সম্রাটের আশা, ভরসা ছিলেন ব্যবসায়ী বাবু। শুধু ঔরঙ্গজেব নয় সম্রাট শাহজাহানকেও আর্থিক দিক থেকে সাহায্য করেছিলেন।
কিন্তু এতকিছুর পরেও দিনশেষে ব্যর্থতার জন্য মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন তিনি। মূলত ছত্রপতির হাত ধরেই বীরজি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। ১৬৬৪ সালে সুরতে গিয়েছিলেন ছত্রপতি শিবাজি। আর সেই সময় তাঁর সমস্ত কিছু ভেঙে নষ্ট করে দেন মারাঠি সৈনিকরা। একই সাথে প্রচুর প্রচুর জিনিস লুট করেন তারা। তবে একবার নয় দু-দুবার সুরতে এসে বীরজির ব্যবসায়ী পুরো ধ্বংস করে দেয় ছত্রপতি শিবাজী। এরপরই বীরজির ১৬৭০ সালে মৃত্যু ঘটে। জানা যায় তখনকার সময় দাঁড়িয়ে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮০ লক্ষ টাকা। বর্তমান সময়ে যার মূল্য কয়েক শো কোটি টাকার সমান।