বাংলা হান্ট ডেস্ক : আরজিকর কান্ডের পর থেকেই দেশ জুড়ে একের পর এক সামনে আসছে যৌন হেনস্তার অভিযোগ। রাস্তাঘাটে কিংবা কর্মস্থানে এমনকি নিজের পরিচিত মানুষদের মধ্যেও মেয়েরা সুরক্ষিত নয়। তাই আজকের দিনেও বিপন্ন সমাজের নারীরা। একথা প্রমাণিত হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু দুঃখের বিষয় একটাই যৌন হেনস্থা কিংবা যৌন নির্যাতনের মত ঘৃণ্য অপরাধ করার পরেও কখনও ক্ষমতার জোরে আবার কখনও উপযুক্ত প্রমাণের অপরাধীরা বেকসুর খালাস হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে খোলা আকাশের নীচে।
যৌন হেনস্তার মামলায় বিরাট রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)
শুধু তাই নয় অনেক সময় তো আবার দেখা যায় নির্যাতিতার যৌন হেনস্তা করারপরেও দোষী নির্যাতিতার পরিবারের সাথে সামঝোতা কিংবা আপোস করেই বিষয়টি নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সম্প্রতি এমনই একটি মামলার শুনানিতে দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত (Supreme Court)। এদিন রাজস্থানের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যৌন হেনস্তার কোন অভিযোগই সমঝোতা করে বা আপোস করে মেটানো যাবে না।
এই বিষয়ে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নির্যাতিতা বা তার পরিবারের সঙ্গে আপোস করে নিলেই যৌন হেনস্তার মতো মামলা থেকে মুক্তি পাবে না অভিযুক্ত। এদিন উচ্চ আদালতে রাজস্থানের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্তার মামলার শুনানি চলছিল। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ২০২২ সালে এক দলিত নাবালিকার সাথে যৌন হেনস্তা করেছিলে সে।
নির্যাতিতা নাবালিকা হওয়ার পাশাপাশি দলিত হওয়ায় এই মামলায় পকসো আইনের সাথেই যুক্ত হয় তফসিলি জাতি-উপজাতি সুরক্ষা আইনও। এরপর নাবালিকার বয়ানের ভিত্তিতেই তদন্তে নামে পুলিশ। অন্যদিকে আইনের হাত থেকে বাঁচতেই ওই গুণধর শিক্ষক গিয়ে নিজেই নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া করে আসে।
সেই সাথে একটি হলফনামাও লিখিয়ে নেয় সে। যেখানে লেখা ছিল একটি ভুল বোঝাবুঝির জন্য নাকি তারা ওই অভিযোগ দায়ের করেছিল, কিন্তু এখন তারা ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর কোন ব্যবস্থা নিতে চান না। এই হলফনামা পুলিশের কাছে জমাও দিয়ে আসে অভিযুক্ত শিক্ষক। পুলিশ তা গ্রহণ করে এবং নিম্ন আদালতে পেশ করে।
আরও পড়ুন : ‘তারিখ পে তারিখ’ বারবার শুনানি পেছানোয় নির্যাতিতার বাবা-মা বললেন, ‘চোখে জল আসে না…’
কিন্তু আদালত ওই হলফনামা খারিজ করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর ওই শিক্ষক রাজস্থান হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। রাজস্থান হাইকোর্ট সেই হলনামা গ্রহণ করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া নির্দেশ দেয়। এরপর হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) ওই মামলা টেনে আনেন এক সমাজ কর্মী।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিচারপতি সিটি রবিকুমার এবং পিভি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত খারিজ করার নির্দেশ দিয়েছে। সেইসাথে এদিন শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে এইভাবে আপস বা সমঝোতা করে কখনই যৌন হেনস্থার অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। এবার সুপ্রিম নির্দেশেই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আবার শুরু হতে চলেছে তদন্ত।