বাংলা হান্ট ডেস্ক : এবার বেতনভুক ‘শিক্ষক’ সন্ন্যাসিনী ও ধর্মযাজকদের জন্য এক যুগান্তকারী রায় দিল শীর্ষ আদালত (Supreme Court)। এদিন একসাথে মোট ৯৩’টি আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ ডিভিশন বেঞ্চ। এদিন আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘আইন সবার জন্য সমান কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।’ তাই ‘সম্পত্তির প্রতিজ্ঞা’ নেওয়ার পরেও প্রত্যেকটি সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত সন্ন্যাসিনী হোক কিংবা ধর্মযাজক প্রত্যেকেই আয়কর আয়নের আওত্তায় পড়বেন।
সন্ন্যাসিনী ও ধর্মযাজকদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) যুগান্তকারী রায়
এই কারণেই সম্পত্তির প্রতিজ্ঞা নেওয়ার পরেও সরকার পোষিত খ্রিস্টান মিশনারী স্কুলে কর্মরত সন্ন্যাসিনী এবং ধর্মযাজকদের বেতন থেকে যদি আয়কর দপ্তর টিডিএস অর্থাৎ (ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স) কাটে তাহলে তাতে কোন ভুল নেই। এই রায়দানের সময় বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন যে কোনো সরকারি খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল গুলিকে টাকা দেওয়ার অর্থ বেতন হিসেবেই ধরা হবে। এক্ষেত্রে তাঁদের বেতন থেকে টিডিএস ছাড় দেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
কিন্তু সরকারি মিশনারি প্রতিষ্ঠানের সন্ন্যাসিনী ও ধর্মযাজকদের দাবি তাঁরা যেহেতু ‘সম্পত্তির প্রতিজ্ঞা’ নিয়েছেন তাই তাঁদের কাছে কোন বেতনই থাকে না। সমস্ত অর্থ কোন দাতব্য অথবা সমাজসেবার কাজে দিয়ে থাকেন তাঁরা। সেই টাকা সরাসরি ‘ডায়োসিস’-র কাছে চলে যায় বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। তাছাড়া নাগরিক জীবনে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলেই ধরা হয়। এমনকি তাঁদের সম্পত্তির ওপরেও পরিবারের কোনো অধিকার থাকে না। তাই তাঁদের নাকি কর দেওয়ারও দরকার নেই।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সন্ন্যাসিনী বা ধর্মযাজকদের নামেই বিল করে থাকে। তাই সেই টাকা যদি তাঁরা নিজেদেরই কোন প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন দাতব্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন তাহলে সে ক্ষেত্রেও টিডিএস কাটতে হবে। তাই উদাহরণ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ধরা যাক কোন একজন ধর্ম যাজক আছেন, আর একজন কোন হিন্দু পুরোহিত রয়েছেন। তিনি যদি বলেন তিনি তাঁর নিজের বেতন রাখবেন না। সেটা কোন সংস্থার পুজোর জন্য দান করে দেবেন। আর কোন ব্যক্তি যদি কর্মরত হয়ে থাকেন তাহলে তিনি যে বেতন পান তার ক্ষেত্রে অবশ্যই ট্যাক্স কাটতে হবে।
আরও পড়ুন : বিদায়ী প্রধান বিচারপতি! অবসর গ্রহণের পর কী কী কাজ করতে পারবেন সিজেআই চন্দ্রচূড়?
বিদায়ী প্রধান বিচারপতির কথায়, ‘আইন প্রত্যেকের জন্যই সমান। আপনি কিভাবে বলতে পারেন যে এক্ষেত্রে সন্ন্যাসিনী ও ধর্মযাজকদের বেতনের ক্ষেত্রে টিডিএস কাটা যাবে না? প্রসঙ্গত এই মামলাটি প্রথমে মাদ্রাজ হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে চলছিল। সেই সময় প্রাথমিকভাবে ধর্মযাজক এবং সন্ন্যাসিনীদের পক্ষেই রায় দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ।
সেই সময় হাইকোর্টও জানিয়েছিল সন্ন্যাসিনী এবং ধর্মযাজকদের বেতনের ওপরে কোন টিডিএস কাটা যায় না। কারণ তারা ব্যক্তিগতভাবে এই টাকা নেন না। পরে সিঙ্গেল বেঞ্চের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মাদ্রাজ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়ে ছিল আয়কর দপ্তর। তারপর সেখানে সেই মামলার শুনানিতে ২০১৯ সালে সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় খারিজ করে দেয় মাদ্রাজ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এরপর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা একগুচ্ছ মিশনারি। এবার মাদ্রাজ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট।