বাংলা হান্ট ডেস্ক: পৃথিবীতে অধর্মের বিনাশ ঘটাতে যুগে যুগে মনুষ্য রূপে এই ধরাধামেই ধরা দেন বিষ্ণু। যার মধ্যে অন্যতম অবতার হচ্ছে শ্রী কৃষ্ণ (Lord Krishna)। মহাভারতের পাতায় পাতায় বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের প্রতিটি কথা। তবে কি জানেন? কলিযুগে দাঁড়িয়েও ভগবান কৃষ্ণের শরীরের একটিমাত্র অংশ পৃথিবীতে আজও রয়েছে সচল। সেই অংশটি হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়। ভারতের এই বিশেষ মন্দিরেই রয়েছে প্রভুর হৃদয় স্থাপন করা। সেখানে গেলেই শুনতে পাওয়া যায় প্রভুর হৃদস্পন্দন। ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় সেই মন্দির। তবে এর পিছনে রয়েছে এক বিরাট কাহিনি, যা শুনলে আপনার চোখের জল চলে আসবে।
কোন মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের (Lord Krishna) হৃদয়ের স্থাপন করা রয়েছে?
ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মন্দির পুরীর জগন্নাথ মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরেই রয়েছে কত না অলৌকিক কাহিনী। মন্দিরের সিংহ দুয়ার থেকে শুরু করে রন্ধনশালা সবেতেই কোন না কোন কাহিনী। আর এই মন্দিরে সচলাবস্থায় রয়েছে শ্রী কৃষ্ণের (Lord Krishna) হৃদয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে শ্রী কৃষ্ণের অন্য আরেক রূপ হল জগন্নাথ। আর এই জগন্নাথ দেবের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত আছে প্রভুর হৃদয়। বলা হয়, মন্দিরে বাবা জগন্নাথকে স্থাপন করার সময় প্রভুর হৃদয়ও স্থাপন করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন সত্যিই কি এই হৃদয় স্থাপন করা রয়েছে?
গান্ধারীর অভিশাপ পেয়েছিলেন যাদব বংশ: শ্রীকৃষ্ণের (হৃদয় স্থাপনের কথা জানতে গেলে আপনাকে যুগ যুগান্তর আগের কথা জানতে হবে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে গান্ধারীর অভিশাপ পেয়েছিলেন শ্রী কৃষ্ণ (Lord Krishna)। সন্তানহারা গান্ধারী রেগে শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপ দিয়ে, বলেন যেভাবে কুরুবংশ শেষ হয়েছে সেভাবেই শেষ হবে যদু বংশ। আর এই অভিশাপও ফলে যায়। মহাভারত শেষ হবার ঠিক ৩৫ বছর পর যদু বংশের পতন হয়, আr সেই দগ্ধে কষ্টে প্রাণ ত্যাগ করেন শ্রী কৃষ্ণ (Lord Krishna)।
তবে যদু বংশের পতন শুরু হয় শ্রীকৃষ্ণের পুত্র সাম্বের হাত ধরে। একদিন দ্বারকায় সপ্তঋষি শ্রীকৃষ্ণ (Lord Krishna) এবং বলরামের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আর সেই সময় কৃষ্ণপুত্র সাম্ব এবং তার বন্ধুরা মিলে সপ্ত ঋষির সঙ্গে মজা করেন। সাম্ব পেটে লোহার টুকরো বেঁধে গর্ভবতী মহিলা সাজেন। এবং তারপর সপ্ত ঋষিকে জিজ্ঞেস করেন তার গর্ভে ছেলে আছে নাকি মেয়ে। এমন মজা করায় ঋষিরা অভিশাপ দেন সাম্বর শরীরে যা বাঁধা আছে তা দিয়েই যদু বংশের পতন হবে।
আর একথা শ্রীকৃষ্ণের কানে উঠতেই, তিনি সপ্ত ঋষির কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ঋষিরা নির্দেশ দেন ওই লোহার টুকরো গুঁড়ো করে নদীর জলে ভাসিয়ে দিতে। কিন্তু লোহার টুকরো গুঁড়ো করে ভাসিয়ে দিল একখন্ড লোহা থেকে যায়। ওই টুকরোটি নদীর একটি মাছ গিলে ফেলে। ওই মাছ আবার ধরা পড়ে এক মত্স্যজীবীর জালে। ওই মাছের পেট থেকে তিনি উদ্ধার করেন লোহার একটি টুকরো, যা দিয়ে ওই মৎস্যজীবী বানান হারপুন।
এদিকে ফলে যায় গান্ধারীর অভিশাপ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ওই সময় যাদব বংশ বিশিষ্ট কিছু কারণে একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ওই যুদ্ধই যাদব বংশকে ধ্বংস করে দেয়। এদিকে যদু বংশ ধ্বংস হয়ে যাবার ফলে ব্যথিত কৃষ্ণ বনে বনে ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে একটি গাছের তলায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর সেই সময় প্রভুর রক্তবর্ণ চরণ দেখে হরিণ মনে করে হারপুন ছোঁড়েন সেই মত্স্যজীবী। যে হারপুন তৈরি হয়েছিল অভিশপ্ত লোহা থেকে। যারা আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন শ্রী কৃষ্ণ (Lord Krishna)। এরপর শ্রী কৃষ্ণের শেষক্রিয়া সম্পন করেন পান্ডব বংশ।
কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো পুরো দেহ ভস্মীভূত হলেও শ্রী কৃষ্ণের হৃদয় অবিকল একই রকম থেকে যায়। আগুনের ছোঁয়া বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারেনি সেই হৃদয়কে। আর সেইসময় আকাশবাণী জানান দেয়, এই হৃদয় ব্রহ্ম হৃদয়, যাকে আঘাত করলেও কিছু হবে না। আদেশ অনুসারে এই হৃদয়ের টুকরো নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন পান্ডবরা। জলের ছোঁয়া পেতেই হৃদয়ের টুকরো নরম পদার্থে পরিণত হয়ে যায়। আর এই পদার্থটি পায় জগন্নাথের পরম ভক্ত ইন্দ্রদ্যুম। নদীতে স্নান করার সময় তিনি এই পদার্থটি পেয়েছিলেন।
আর এটি পাওয়ার পর ইন্দ্রদ্যুম শ্রীকৃষ্ণের স্বপ্নাদেশ পান। তিনি আদেশ দেন এই পদার্থটি যেনো যে কোন কাঠের দেব-দেবীর মূর্তিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এই আদেশ মেনে তিনি পুরীর জগন্নাথ দেবের মূর্তিতে এই পদার্থটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেই থেকেই জগন্নাথ দেবের মূর্তিতে শ্রীকৃষ্ণের(Lord Krishna) হৃদয়ের স্থাপন করা রয়েছে।
অবশ্য জগন্নাথ দেবের মূর্তিও কাঠ দিয়ে তৈরি। তবে আপনাদের জানিয়ে রাখি এই ব্রহ্ম হৃদয় আজ পর্যন্ত কেউই চোখে দেখেনি। প্রতি ১২ বছর অন্তর জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরি বদলানো হয়, আর তাতেই স্থানান্তরিত করা হয় শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়। কিন্তু যখন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন গোটা চত্বরজুড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি সেই সময় পুরোহিতরা চোখে কাপড় বেঁধে হাতে দস্তানা পড়েই তারপর এই কাজ সম্পন্ন করেন। তবে বলা হয় এই ব্রহ্ম হৃদয় যারা দর্শন করেন তাদের নাকি মৃত্যু ঘটে। তাই এই অলৌকিক দর্শন কেউই কখনোই করতে পারেনি।