বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমানে সমাজ মাধ্যমের দৌলতে আমরা নিত্য নতুন খবর পেয়ে থাকি। কিন্তু এবার সমাজ মাধ্যমে এমন একটি পোস্ট ভাইরাল (Viral) হয়েছে যা দেখে অবাক নেট জনতা। এমন ভাবেও যে বিয়ে করা সম্ভব সেটা হয়তো এই যুবতীকে না দেখলেই কল্পনা করা যেত না। যেখানে বাঙালিদের বিয়েতে সিঁদুর ছাড়া বিবাহ অসম্পূর্ণ। সেখানে তিনি সিঁদুর ছাড়াই বিয়ে করেছেন। আর না মেনেছেন কোন ধর্মীয় আচার। যুবতীর পোস্ট দেখে যেমন কেউ কেউ সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখেছেন। বর্তমানে এই যুবতী সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল (Viral) ফিভারে আক্রান্ত।
ভাইরাল (Viral) পোস্টে কি ঘটেছে:
চলছে বিয়ের মরশুম। সমাজমাধ্যমে, ফেসবুক ফিডে এখন শুধুই বিয়ের ছবি ভেসে আসছে। আর এই বিয়ের মরশুমেই গাঁটছাড়া বেঁধেছেন এক দম্পতি। তবে তাদের বিয়ে আর সাধারণ পাঁচটা বিয়ের মত নয়। উষসী তিতির নামে নববধূ তার বিয়ের সাজের ফটো পোস্ট করেছেন। একদম বাঙালি কনের সাজে লাল শাড়ি, সাদা ব্লাউজ, মাথায় টিপ, কলকা দিয়ে সেজেছেন। তবে পরনে যে গয়নাগুলো ছিল সেগুলি একটাও সোনার নয়। পোস্টটিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “জ্ঞান হওয়া ইস্তক বিয়ে করার দুটো শর্ত দিয়ে রেখেছিলাম বাবা-মাকে। এক, বাবার সারাজীবনের যাবতীয় সঞ্চয় নিঃশেষ করে সোনার গয়না কেনার অশ্লীল কাজটা আমি করবনা। দুই, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করবনা।” এমন ভিন্ন চিন্তা ধারার ব্যক্তি বোধ হয় খুবই কম পাওয়া যায়।
আমরা সাধারণত মেয়েদের বিয়েতে দেখে থাকি বাবা-মায়েরা সারা জীবনের জমানো সঞ্চয় এক নিমিষেই শেষ করে ফেলেন। শুধুমাত্র মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাতে সুখে থাকে তার জন্য বাড়িঘর সব বিক্রি করে মেয়েকে বিয়ে দেন। তবে এবার উষসীর বিয়েতে অন্যরকম ভাবনা দেখা গেলো। বাবার সঞ্চয় বিন্দুমাত্র হাত না দিয়ে নিজের সাধ্যমত ইমিটেশন গয়না পরেই বিয়ে করেছেন। শুধু তাই নয় একই সাথে বিয়ের দিন কোন রকমের কন্যা সম্প্রদান, সাত পাকে বাঁধা, সিঁদুর দান রীতিও পালন করেননি। যদিও এমন কাজ করায় আত্মীয় পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে কম গঞ্জনা শুনতে হয়নি। বরং নিত্যদিন এই সমালোচনাই হয়ে উঠেছিল তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উষসী সমাজ মাধ্যমে করা পোস্টে (Viral) লেখেন, “দুটোর জন্যই বিয়ে করার সময় অসংখ্য সমালোচনা শুনেছি মুখের উপর। বন্ধু বান্ধব ও বলেছে, ঝুটা গয়না পরে বিয়ে করবি? আবার কেউ বলেছেন চাকরি করিস, বাবা চাকরি করে.. তাও এত ছোটলোকি?” এখানেই শেষ হয় তিনি আরো বলেন “লড়াইটা একদিনের ছিলনা। দিনের পর দিন অসংখ্য মানুষকে জবাবদিহি করতে হয়েছে। বাবাও পুরোই মেনে নেয়নি, কিছু গয়না আমায় কিনতে হয়েছে, রোজ পরার মতো টুকটাক।বিয়ের আগেরদিন পর্যন্ত নানাজনের থেকে শুনেছি নানান বাঁকা মন্তব্য। এখনও শুনছি।” তবে উষসী এইসব বিষয় ভেঙে পড়েননি। বরং সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, দিব্যি সংসার পেতেছেন।
আরও পড়ুন: আর নয় চিন্তা! শীঘ্রই মুদ্রাস্ফীতি থেকে মিলবে রেহাই, দাম কমবে খাদ্যপণ্যেরও, সামনে এল বড় আপডেট
আসলে এই যুবতী পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী নয়। তাইতো অন্যান্য মেয়েদের মত মাথাভরা সিঁদুর কিংবা যজ্ঞ, মন্ত্র পড়ে বিয়ে করেনি তিনি মন থেকে বিয়ে করেছেন। তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে উষসীর কাছে বাবা-মায়ের পরিশ্রমটাই সবার আগে দামি। তিনি বলেন, “আমি পিতৃতান্ত্রিক ধর্মীয় ব্যবস্থায় বিশ্বাস করিনা, আর উল্টোদিকে বাবার সারাজীবনের পরিশ্রম আমার গয়না কিনে জলে দিতে হোক, তাতেও বিশ্বাস করিনা। আর, আমার নিজেরও ক্ষমতা নেই। যেটুকু ক্ষমতা ছিল, শখ মিটিয়েছি।” আর এমন পোস্টের পর থেকেই রীতিমতো সমাজ মাধ্যমে ভয়ংকর মন্তব্যের ঝড় উঠেছে।
রীতিমতো দুভাগে বিভক্ত হয়েছে নেট নাগরিকরা। কেউ কেউ উষসীকে সমর্থন করেছেন, আবার উল্টোদিকে এমন ভিন্ন ভাবনাকে বিরোধিতা করেছেন অনেকে। কেউ বলেছেন, সোনার গয়নার বদলে ইমিটেশন পরে বিয়ে করা কোন অপরাধ নয়, আবার কেউ বলেছেন বিয়েতে সবার আগে দুজনের মনের মিল প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: খেলোয়াড় কিনতে অনীহা! IPL-এর নিলামের পরেও এই দলগুলির পার্সে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা
তবে উল্টোদিক থেকে ধেয়ে এসেছে নিন্দনীয় মন্তব্য। কেউ বলছেন, “ফেক ফেমিনিস্ট”, আবার কেউ বলছেন, “রাজুদার মত সকাল সকাল পরোটা বিক্রি করে ভাইরাল (Viral) হতে না চাইলে এভাবে একটা ফটো তুলে সাময়িক ভাইরাল হওয়া যায়”। আবার কারো মন্তব্য, “ভালো রিচ পেলো অ্যাকাউন্টটা।” তার সাজগোজ, খাওয়া-দাওয়া ফটোগ্রাফি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সকলের মতে তিনি নাকি পুরোটাই ভাইরাল হওয়ার জন্য করেছেন। অর্থাৎ এক প্রকার উষসীকে তার এমন ভিন্ন ভাবনার জন্য রীতিমতো কাঠগড়ায় তোলে নেট জনতারা। যদিও এটি কোন নতুন বিষয় নয়। এমন ঘটনা হামেশাই ঘটে থাকে। তবে এই সমস্ত কিছুকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে উষসী তার বিবাহ জীবন দিব্যি উপভোগ করছেন।