বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কোনো মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে নাগরিকের বিদেশ সফর (Foreign Tour) আটকানো যায় না। বৃহস্পতিবার এক মামলায় এমনই রায় দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Calcutta High Court Justice Amrita Sinha)। বিদেশযাত্রার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কলকাতার এক তরুণী। সেই মামলাতেই পুলিশকে পিসিসি দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দেন।
কি জানা যাচ্ছে? কলকাতার এক তরুণী বিদেশে নিজের প্রেমিকের কাছে যেতে চেয়ে ভিসার আবেদন করেছিলেন। তার প্রেমিক আমেরিকায় থাকেন। সেখানে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন। তরুণী ভিসার আবেদন করলে আমেরিকার দূতাবাস থেকে পুলিশি ছাড়পত্র বা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের (পিসিসি) কথা বলা হয়। যা ভারতীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে দেওয়া হবে।
সেই মতো আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করেন ওই তরুণী। কিন্তু সেখান থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে ওই সার্টিফিকেট তাকে দেওয়া যাবে না কারণ পুলিশ সূত্রে তারা জানতে পেরেছে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। যেই মামলা এখনও বিচারাধীন। এরপরই ওই তরুণী আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রথমে শিয়ালদহ আদালতের দ্বারস্থ হন ওই তরুণী। সেখানেও প্রথমে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
যদিও পরে হাই কোর্টের নির্দেশে বিচারক একটি নির্দেশনামা দিয়ে জানান, ওই তরুণীর বিদেশ যেতে পারবে। কিন্তু তার পরও পুলিশ বা পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। এরপর শেষমেষ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই তরুণী।
বেনিয়াপুকুর থানা নিবাসী ওই তরুণী আদালতে জানান, ২০২২ সালে তার সঙ্গে তার প্রেমিকের ফেসবুকে আলাপ। পরে দু’জনে বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। দুই পরিবারকে সেই বিষয় জানানো হলে তরুণীর পরিবার বিয়েতে সম্মতি দিলেও ওই যুবকের পরিবার মেনে নেয় নি। উল্টে প্রেমিকের বাড়ি থেকে জানানো, তাদের ছেলের জন্য ইতিমধ্যেই পাত্রী দেখা হয়ে গিয়েছে।
তরুণীর দাবি, পরিবারের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করবেন না বলে বাড়িতে জানিয়ে দেয় তার প্রেমিক। আদালতে তিনি জানান, তার প্রেমিকের জন্য তার বাড়ির লোক যে পাত্রী ঠিক করেছিলেন তার বাড়ি বিহারে। সেই তরুণী নাকি গত বছরের ১৭ জানুয়ারি বিহার থেকে কলকাতায় এসে তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে চুরি ও মারধরের অভিযোগ তুলেছে মামলা করেন। বেনিয়াপুকুর থানায় মামলা দায়ের হলে তা শিয়ালদহ কোর্টে ওঠে। ২৩ এর অক্টোবরে তরুণী এবং তার পরিবারকে নিঃশর্ত জামিন দেয় আদালত।
আরও পড়ুন: নতুন বছরের শুরুতেই বাড়বে DA, কত শতাংশ? রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য পাকা খবর
এর পর আমেরিকায় যেতে চেয়ে ভিসার জন্য আবেদন করেন ওই তরুণী। গত ২৭ মার্চ মুম্বইতে যান ভিসার জন্য। তবে পাসপোর্ট অফিসের পিসিসি না থাকলে ভিসা দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরই বেনিয়াপুকুর থানায় যান তরুণী। পিসিসি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু থানা থেকে জানানো হয়, ফৌজদারি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে, তাই পিসিসি দেওয়া যাবে না। এরপরই শিয়ালদহ আদালতের যান তরুণী। সেখানে অনুমতি না মিললে শিয়ালদহ আদালতকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যান তরুণী।
হাই কোর্ট তরফে শিয়ালদহ আদালতকে বিষয়টি বিবেচনা করে পিসিসি দেওয়ার জন্য বেনিয়াপুকুর থানাকে নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু তার পরও জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই তরুণী। সেখানেই তার পক্ষে রায় দিল আদালত।