বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কেন্দ্রীয় (Central Government) প্রকল্পে রাজ্যের তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ বহুদিনের। কেন্দ্রীয় (Central Government) আবাস যোজনা প্রকল্প থেকে শুরু করে একশো কাজ প্রকল্প সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পে বাংলার মানুষ বছরের পর বছর বঞ্চিত হয়ে চলেছে। অতীতে বাম জামানায় এই একই অভিযোগে কেন্দ্রের (Central Government) বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বাম সরকারও।
অবশেষে বাংলায় বরাদ্দ শুরু করল কেন্দ্র (Central Government)
যদিও সেই দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত এ সম্পর্কে অনেকের মনে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। কিন্তু এখন গোটা বিষয়টাই হিসেব-নিকেশের মাধ্যমে অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত গত চার বছর ধরে বকেয়া টাকা মেটানোর ব্যাপারে বাংলার সঙ্গে দিল্লির টানাপোড়নের ঘটনা বেনোজির। অভিযোগ গত দু’বছর ধরে গ্রামের রাস্তা তৈরির প্রকল্প ‘গ্রামীণ সড়ক যোজনা’য় বাংলাকে এক পয়সাও দেয়নি মোদি সরকার।
শুধু তাই নয় গত আর্থিক বছর থেকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র (Central Government)। এছাড়া ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবাস যোজনা খাতে ৮২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার জন্য চিঠি দিয়েও শেষ পর্যন্ত কোনো টাকা দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। কাজেই বোঝা যাচ্ছে তালিকাটা বেশ লম্বা। তবে একমাত্র অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় করের টাকায় যে অংশ রাজ্যের পাওয়ার কথা সেটাই পাচ্ছে বাংলা।
এছাড়া মিড ডে মিল সহ আরও বেশ কিছু প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নামমাত্র টিকে আছে। তবে এই এত কিছু না পাওয়ার মধ্যে মঙ্গলবার রাতেই এল এক দারুন সুখবর। সব্বাইকে কার্যত চমকে দিয়ে নয়া দিল্লির তরফ থেকেই নবান্নতে এসেছে একটি চিঠি। যা দেখে মনে করা হচ্ছে এটাই বরফ গলার ইঙ্গিত। নবান্নের কর্তাদের মতে এতে বিশাল উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই ঠিকই তবে ব্যাপারটা যে ইতিবাচক তা বলা যেতেই পারে।
আরও পড়ুন: RG Kar-র পর ডাক্তারদের নিয়ে বিরাট কর্মযজ্ঞ! অভিষেকের ‘সেতুবন্ধন’-এ ১২০০ চিকিৎসক
কারণ অবশেষে পুরো দু’বছর পর কেন্দ্রীয় গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে বাংলাকে এক হাজার কোটির বেশি কিছু বেশি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। এর আগে এই প্রকল্পে শেষ বার কেন্দ্র টাকা পাঠিয়েছিল দু’বছর আগে ২০২২ সালে নভেম্বর মাসে। সেবার বাংলাকে মোট ৩৪৩ কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রসঙ্গত গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে কেন্দ্রের তরফ থেকে মোট ৬০ শতাংশ টাকা বরাদ্দ করা হয় আর বাকি ৪০ শতাংশ যায় রাজ্যের কোষাগার থেকে।
কিছুদিন আগেই গ্রাম গঞ্জের নতুন ৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য কেন্দ্রের কাছে টাকা চেয়েছিল রাজ্য। তার মধ্যে ৩ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির প্রস্তাব মঞ্জুর করে এবার টাকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই বাজপেয়ী জামানা থেকেই এই প্রকল্পে কেন্দ্রের টাকা পেয়ে আসছে বাংলা। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর থেকে কেন্দ্রের সাথে রাজ্যের আর্থিক সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছে।
কেন্দ্রীয় অনুদানে চলা বাংলার প্রকল্পগুলিতে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে বিজেপি সরকার।একাধিকবার পর্যবেক্ষণে এসেছে কেন্দ্রীয় টিম। এমনকি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখাও করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবুও এতদিন তরী ছিল সেই তিমিরেই। সদ্য শুরু হয়েছে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন।
সেখানেই সম্প্রতি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বিধানসভায় প্রস্তাব এনেছিল শাসক দল। সেখানেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন দুর্নীতি বন্ধ হলেই কেন্দ্র টাকা দিতে প্রস্তুত। তবে এখনই যে বরফ পুরোপুরি গলছে একথা বলা মুশকিল। আগামী দিনে আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ শুরু হলে তবেই বোঝা যাবে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের আর্থিক সম্পর্ক সত্যিই উন্নত হয়েছে কিনা।