বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দু’বছর ধরে টাকা দেওয়া বন্ধ। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগ এনে একাধিকবার নিন্দায় সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তারপরেও গলেনি বরফ। তাই কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াই এবার রাজ্যের কোষাগার থেকে টাকা নিয়েই বাংলার আবাস যোজনা (Awas Yojana) প্রকল্প পুনরায় চালু করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
‘দিদিকে বলো’তে ফোন করেও নাম নেই আবাস যোজনায় (Awas Yojana)
চলতি মাসেই অৰ্থাৎ আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকেই এই প্রকল্পের যোগ্য আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে প্রথম কিস্তির টাকা। কিন্তু এই প্রকল্পে (Awas Yojana) টাকা দেওয়া শুরুর আগেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠছে একাধিক অভিযোগ। বলা হচ্ছে এমনও অনেক আবেদনকারী আছেন যাঁরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বাদ পড়েছেন এই প্রকল্পের তালিকা থেকে।
সম্প্রতি এমনই এক অভিযোগ উঠেছে বীরভূমের নলহাটির পাইকপাড়া থেকে। এই এলাকার বাসিন্দা কার্তিক মাল থাকেন খড়ের চাল ও মাটির কাঁচা বাড়িতে। তাই এই সরকারি প্রকল্পে (Awas Yojana) পাকা বাড়ি পাওয়ার আশা নিয়েই ‘দিদিকে বলো’ (Didi ke Bolo) হেল্পলাইনে ফোন করে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সমীক্ষা হওয়ার পর দেখা যায় উপযুক্ত দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও ওই সমীক্ষায় নামই নেই কার্তিকের। অভিযোগ জানিয়ে ইতিমধ্যেই নলহাটি ১ নম্বর ব্লক অফিসে বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছেন কার্তিক।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক পেশায় দিনমজুর। বহুদিন ধরে ওই বাড়িতেই বৃদ্ধা মা আর গোটা পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। আবাস যোজনা (Awas Yojana) প্রকল্পের সমীক্ষায় নাম না আসায় ২ দিন আগেই ব্লক অফিসে আরও একবার বাড়ি পাওয়ার জন্য লিখিত ভাবে আবেদন করেন তিনি। কার্তিক জানিয়েছেন প্রায় সারা বছর তিনি অন্য জেলা ও রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘শীত-বর্ষায় মাটির বাড়িতে প্রচণ্ড কষ্ট পায় পরিবার। তালিকা থেকে আমার নাম কেন বাদ পড়ল তা জানি না।’
আরও পড়ুন: ৪ মাসে ২ বার আইনজীবী পরিবর্তন! এবার দায়িত্ব পেলেন এই দু’জন
তালিকা থেকে বাদ পড়ার পর কার্তিক জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পরিবার নিয়ে ওই মাটির বাড়িতে বসবাস করছেন। তাঁর কথায়, ‘বৃদ্ধ মায়ের ওষুধ থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা আর সেইসাথে সংসার খরচ শেষে সারা বছর এক টাকাও জমাতে পারি না। তাই আর বাড়ি তৈরি করতে পারিনি।’ নলহাটির বাসিন্দা ওই যুবক জানিয়েছেন তিনি নাকি আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়ার জন্য চলতি বছরের অগস্ট মাসেই ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করেছিলেন।
পরে বিডিও অফিস থেকে ফোন করে প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল তাকে। তারপর নাকি কথা মতোই সমস্ত নথি-সহ বাড়ির ছবিও জমা দিয়েছিলেন কার্তিক। এমনকি প্রশাসনের আধিকারিকরা বাড়ি পরিদর্শন পর্যন্ত করে গিয়েছিলেন। তাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন গোটা পরিবার। কিন্তু কোথায় কি! সমীক্ষার তালিকা প্রকাশ হতেই দেখা গেল নাম নেই তাঁর। কার্তিকের কথায় ‘কেন নাম বাদ গেল তা জানি না। আবারও বাড়ির জন্য বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন করেছি।’
প্রসঙ্গত এই আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরাও। এপ্রসঙ্গে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘স্বচ্ছ ভাবে তালিকা না প্রকাশ না করা হলে জেলা জুড়ে আন্দোলন শুরু হবে।’ একইসাথে সিপিএমের তরফেও অভিযোগ করা হয়েছে নলহাটি ১ ব্লকে আবাসের বাড়ি নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে বিরোধীরা প্রতিবাদ করলেই নাকি ব্লক চত্বরে জুটছে মার।