বাংলা হান্ট ডেস্ক: সঙ্গীতের জগতে বিরাট অবক্ষয়। শেষ পর্যন্ত থামলো তবলার বোল। আর শোনা যাবে না জাকির হুসেনের (Zakir Hussain) আঙুলের তালে ওঠা ঝঙ্কার। চিরনিদ্রার দেশে পাড়ি দিলেন কিংবদন্তি তবলা সম্রাট জাকির হুসেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি গানের সুরে নয়, তবলার সুরে সঙ্গীতকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থিত করেছেন। আজ তিনি সকলের কাছে জাকির হুসেন হলেও উস্তাদের পরিচয় কিন্তু আলাদা। আজ জানাবো তাঁর জীবনে অজানা কিছু কাহিনী।
জাকির হুসেনের (Zakir Hussain) অজানা কিছু কাহিনী:
১৯৫১ সালের ৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জাকির হুসেন (Zakir Hussain)। জাকির হুসেনের বাবা কিংবদন্তি তবলা বাদক উস্তাদ আল্লা রাখা। বাবার হাত ধরেই তবলা বাজানো শেখা। মাত্র ৩ বছর বয়সেই প্রশিক্ষণ শুরু হয় তাঁর। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় মাত্র ৭ বছর বয়স থেকেই তিনি অনুষ্ঠানে নিজের কৃতিত্ব দেখানো শুরু করেন। শুধু তাই নয় একই সাথে ১২ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক স্তরে পারফর্ম করেছিলেন তিনি। অল্প বয়সে তাঁর প্রতিভা দেখে বাকরুদ্ধ হয়েছিলেন উপস্থিত সকলে।
শুধু বাদ্যকার হিসেবেই দক্ষ নন একই সাথে একজন ছাত্র হিসেবেও তিনি ছিলেন যথেষ্ট মেধাবী। স্কুল শিক্ষা সম্পন্ন করেন মুম্বইয়ের সেন্ট মাইকেল হাইস্কুল থেকে। এরপর, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও মুম্বাই থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হন।
জাকির হুসনের এহেন প্রতিভায় মুগ্ধ ছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা। এমনকি এই কারণেই কিংবদন্তি তবলা বাদককে ওবামা অল-স্টার গ্লোবাল কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি একমাত্র ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞ যিনি এই আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।
এমনকি শিল্পী নিজের ক্যারিয়ারে একাধিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে জাকির হুসেন (Zakir Hussain) পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ ও ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। এছাড়াও ১৯৯০ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি ফেলোশিপ, ২০১৮ সালে রত্ন সদস্য পদকও লাভ করেছেন। শুধু তাই নয় একই সাথে গ্র্যামি পুরস্কারেও সম্মানিত তিনি। জানা গিয়েছে, শিল্পী ৫টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন। এই শিল্পী যেনো লাখে নয় কোটিতে একটা।
তবে আজ তিনি সকলের কাছে জাকির হুসেন হলেও, শিল্পীর আসল পদবী ছিল কুরেশি। এই হুসেন পদবী উপাধি হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকেই তিনি সকলের কাছে হয়ে উঠেছেন জাকির হুসেন।
আরও পড়ুনঃ তীব্র বিস্ফোরণে ঘটল ভূমিকম্প! ইজরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত সিরিয়া, ভিডিও ভাইরাল হতেই হইচই বিশ্বজুড়ে
জাকির হোসেন শুধু তবলা বাদকই নয়, একই সাথে সুরকার ও সঙ্গীত প্রযোজকও ছিলেন। পাশাপাশি অভিনয় জগতেও তিনি নিজেকে সুদক্ষ অভিনেতা হিসেবেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার ক্যারিয়ারের ১২টি সিনেমা করেছেন বলে জানা যায়। এর ফলে বলিপাড়ায় অনেকের সাথেই তার পরিচিতি ছিল। অভিনয়ের পাশাপাশি বিরজু মহারাজের সঙ্গে তাল মেলাতেন। বিভিন্ন সময় দুজনকে একসঙ্গে পারফর্ম করতেও দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বদলে গেল সমীকরণ! KKR-এর অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে এবার ৪ জন খেলোয়াড়, কাকে বাছবেন শাহরুখ?
অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় তিনি শুধু শিল্পী নয় “শিল্পীদের রাজা”। তাইতো তিনি চলে যাওয়ায় শুধু সঙ্গীত জগত নয় টলিউড, বলিউড, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই নেমেছে শোকের ছায়া। তিনি ছিলেন ভারতের এক অন্যতম রত্ন। আজ জাকির হুসেন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও তাঁর সুরের ঝংকার আজীবন অমলিন থাকবে।