বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কথায় আছে ‘শব্দই ব্রহ্ম’! মুখ ফস্কে একবার যে কথা বেরিয়ে যায় সেকথা আর ফেরানো যায় না। সম্প্রতি সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে এক বেফাঁস মন্তব্য করছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। যার জেরে ইতিমধ্যেই দলনেত্রী তথা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) রোষের মুখে পড়েছেন ফিরহাদ।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই কাজ বন্ধ হল ফিরহাদের (Firhad Hakim)
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্র মারফত খবর, ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) আপাতত সাত-দশ দিন কোনও সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না। তাঁর গতিবিধিতে এমনই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে যেখানে গেলে সংবাদমাধ্যম তাঁকে তাঁর মৌলবাদী মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে সেখানে যাওয়া থেকে পুরোপুরি বিরত থাকতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রত্যেক বছর বড়দিন আর বর্ষবরণের আগে পরে কলকাতায় একাধিক মেলা আর উৎসবের আয়োজন করা হয়। যার উদ্বোধন করে থাকেন রাজ্যের শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা। কিন্তু এবার তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্দেশ মেনে এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানেই যাচ্ছেন না পুরমন্ত্রী। হাওড়া পুরসভা ২৩ ডিসেম্বর থেকে কার্নিভালের আয়োজন করেছে। সূত্রের খবর, সেখানেও ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) যাবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) স্পষ্ট জানিয়েছেন গত শনিবার সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু প্রশ্নে যে সব কথা তিনি বলেছেন, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আর কোনও প্রতিক্রিয়া দেবেন না। যদিও সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই এব্যাপারে দলের মধ্যে কৈফিয়ত দিয়েছেন ববি হাকিম। জানা যাচ্ছে, ববি দলকে জানিয়েছেন, তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আসলে তিনি নাকি সরল গণিতের অর্থে সংখ্যালঘুদের সংখ্যাগুরু হয়ে ওঠার কথা বলেননি।
আরও পড়ুন: ‘রাজ্য পুলিশের তদন্তের ওপর ভরসা রাখতে পারছি না’, শুনেই যা বলল কলকাতা হাইকোর্ট
ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে মন্ত্রী মশাইয়ের আরও সাফাই, তিনি নাকি বলতে চেয়েছিলেন, সংখ্যালঘু মুসলমানদের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ শিক্ষা। এই কারণেই সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়েও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। তাঁর দাবি একমাত্র শিক্ষাই এই অন্ধকার দূর করতে পারে। তাই সংখ্যালঘুদের মেহনত করে নিজেদের ‘কাবিল’ করে তোলা উচিত। ফিরহাদের দাবি আল্লাহর রহমত আর সংখ্যালঘুদের মেহনত থাকলে তবেই তাঁরা সমাজে অগ্রসর হতে পারবেন।
ফিরহাদ হাকিম বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের দু’দুটি দফতরের মন্ত্রী, কলকাতার মেয়র, এবং কেএমডিএ-র চেয়ারম্যান। এহেন মহানাগরিক গত শনিবার সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু প্রশ্নে জোর গলায় বলেছিলেন, ‘আমরা বাংলায় ৩৩ শতাংশ। আর সারা ভারতে মাত্র ১৭ শতাংশ। তবে আমরা নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করি না। এমন এক দিন আসবে যখন আমরাই সংখ্যাগুরুর চেয়েও সংখ্যাগুরু হব।’
এই মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হতেই তৃণমূলের তরফে তড়িঘড়ি কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয় ফিরহাদের বিরুদ্ধে। এসবের মধ্যেই বুধবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতই ফিরহাদের মেয়ে প্রিয়দর্শিনী হাকিম দাবি করেন, তাঁর বাবা নাকি উর্দু বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছেন। অথচ, সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে ববি গত সপ্তাহে যে রগরগে মন্তব্য করেছিলেন তা উর্দুতে নয় ছিল স্পষ্ট বাংলা ভাষায়। আর সে কথার মানে এখন আর বুঝতে বাকি নেই কারও। আপাতত মুখ খোলা বারণ ফিরহাদের।