বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চে শুরু হয়েছে এসএসসি ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি (SSC Recruitment Scam)। এদিন শুনানিতে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, “নম্বর কারচুপি হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীদের নম্বর বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
রাজ্যের আইনজীবীর কাছে বিচারপতির প্রশ্ন, যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বাছাই করতে রাজ্যের সম্মতি রয়েছে কি? রাজ্যের আইনজীবী সমর্থন জানিয়ে বলেন, তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এই বিষয়ে আলাদা আলাদা তথ্য দিয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী আদালতে বলেন, নিয়োগ তালিকায় থাকা যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের বাছাই করা সম্ভব কি?
কমিশনকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “হাই কোর্ট কেন বলল (যোগ্য-অযোগ্য) আলাদা করা সম্ভব নয়? আমাকে বোঝান।”শিক্ষা দুর্নীতির মামলার তদন্তে নেমে বেশ কিছু ওএমআর শিট উদ্ধার করেছিল সিবিআই। তবে সেসবের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী। এই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “৬৫বি নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এখানে আসল ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছে। ৬৫বি করলে বোঝা সম্ভব হার্ড ডিস্ক থেকে কী ডাউনলোড করা হয়েছে। আর কী আপলোড করা হয়েছিল।’
এর সঙ্গে প্রমাণের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। ৬৫বি করে সার্ভারে তথ্য কারচুপি হয়েছে তা বোঝা সম্ভব নয় বলে জানান চিফ জাস্টিস। বিচারপতির প্রশ্ন, ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছিল কি না? যদি নষ্ট করা হয় তাহলে তা কত দিনের মধ্যে করার নিয়ম রয়েছে? রাজ্য জানায়, এক বছর পরে ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়। পাশাপাশি ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ এসএসসি সংরক্ষণ করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, “সাধারণ ভাবে এটা সঠিক নয়।”
রাজ্যকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “কেউ ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করেনি। এসএসসিও করেনি। কমিশন আরেক সংস্থা নাইসাকে দায়িত্ব দিয়েছিল। তারাও করেনি। নাইসা স্ক্যানটেককে দিয়েছিল যাবতীয় তথ্য, কিন্তু তারাও করেনি। স্ক্যানটেক শুধু স্ক্যান করেছিল।”
এরপরই পাল্টা এসএসসির উদ্দেশে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, “কোনও টেন্ডার ছাড়াই নাইসাকে দায়িত্ব দিয়েছিল এসএসসি। তাদের এমন আচরণের কারণ স্পষ্ট নয়।” এরপরই চিফ জাস্টিস বলেন, “অনেক কিছুই গোপন করা হয়েছে। আসল এবং স্ক্যান ওএমআর শিট একই নয় এই বিষয়টা পরিষ্কার।” মেটা ডেটা খুঁজে বের করা না হলে যোগ্য-অযোগ্য চিহ্নিত করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে বলেন, “অযোগ্যদের খুঁজে বার না-করে সুপারনিউমেরারি পোস্ট তৈরি করলেন কেন আপনারা? অযোগ্যদের বাদ দেওয়া হবে না এই বিষয়টি আপনারা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।” রাজ্যের আইনজীবী বলেন, “ হাই কোর্টের অনুমতি ছাড়া নিয়োগ করা যেত না। সেই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নিয়োগ করা হয়নি।”
রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত কোনও অনিয়মের অভিযোগ করা হয়নি। মূল মামলা দায়ের হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ২-৩ বছর বাদে। তাহলে গোটা প্যানেল বাতিল করা হল কেন? এসএসসিও কার্যত একই দাবি তোলেন। পাল্টা প্রধান বিচারপতি SSC- র উদ্দেশে বলেন, নিজেদের হাতে তথ্য না রেখে অন্যদের হাতে কিভাবে তুলে দিতে পারলেন? পঙ্কজ বনসল যে কারচুপি করেছে তা জানা গিয়েছে। আপনারাও কারচুপি করেছেন। সমস্যা আপনাদের নিয়ে।” কোন কোন ওএমআর শিটের তথ্য ক্যাপচার করা হয়েছে তা দুপুর ২টোর মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট সঠিক রায়ই দিয়েছে বলেও পর্যবেক্ষণে জানায় সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন: CBI-এ আস্থা নেই, নতুন করে তদন্ত চাই! সোজা হাইকোর্টের দ্বারস্থ তিলোত্তমার বাবা-মা
উল্লেখ্য, চলতি বছর ১৮ এপ্রিল নিয়োগ দুর্নীতির জেরে এসএসসি ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের এই রায় নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় গোটা রাজ্যে। উচ্চ আদালতের রায়ে এক ধাক্কায় চাকরি যায় প্রায় ২৬০০০ জনের।
হাইকোর্টের রায়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার, এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা উঠলে আপাতত সকলেরই চাকরি বহাল রাখা হয়েছে। সকলকে রক্ষাকবচ দিয়েছে আদালত। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, দুর্নীতি প্রমাণ হলে শিক্ষকদের (ssc recruitment scam) চাকরি তো যাবেই পাশাপাশি ফেরত দিতে হবে বেতনও।