বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের রেশন দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘদিন ধরে জেলবন্দী রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriya Mallick)। নিয়োগ দুর্নীতির মামলার তদন্তে নেমে তার বিপুল পরিমাণ হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে ইডি। কিন্তু এবার আদালতে এই রেশন দুর্নীতির মামলায় এবার বিচারকের প্রশ্নের মুখে ইডি।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ চাইল আদালত (Jyotipriya Mallick)
ইডির কাছে আদালতের প্রশ্ন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallick) ওই হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি যে রেশন দুর্নীতির মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এর প্রমাণ কোথায়? কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিও অবশ্য এর পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন। কেন তারা মনে করছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এই হিসাব বহির্ভুত সম্পত্তির সাথে রেশন দুর্নীতির যোগাযোগ রয়েছে?
তারই পক্ষে একাধিক যুক্তি সাজিয়েছে ইডি। পাশাপাশি এই দুর্নীতিকে হিমালয়ের সঙ্গেও তুলনা করেছেন ইডির আইনজীবী। এই রেশন দুর্নীতির মামলায় জামিনের আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বালু। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই ইডির তরফে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর জামিনের বিরোধিতা করা হলে বিচারক তাদের কাছে জানতে চান,নদিয়ার যে এফআইআর থেকে এই তদন্ত শুরু হয়েছিল, সেখানে তো সাধারণ চুরির অভিযোগ ছিল। তাহলে রেশন সংক্রান্ত সেই অভিযোগকে কেন ‘দুর্নীতি’র আখ্যা দিচ্ছে ইডি?
শুধু তাই নয় আদালতের আরও প্রশ্ন ওঠে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallick) যে সম্পত্তির হদিশ মিলেছে তা অন্য কোন দুর্নীতির ফসলও তো হতে পারে রেশন দুর্নীতি থেকেই যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওই সম্পত্তির মালিক হয়েছে তার প্রমাণ কোথায়? এই রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে একাধিক সরকারি নথি এবং সরকারি অফিসারের সিল পাওয়া গিয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছিল ইডি। বিচারকের আরও প্রশ্ন ওই সরকারি আধিকারিকদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি? তাঁদের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হয়নি? যারা রেশন কম পেয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, ইডি তাঁদের সঙ্গে কেন কথা বলেনি?
জ্যোতিপ্রিয়ের (Jyotipriya Mallick) আইনজীবী আদালতে রেশনে দেওয়া শস্যের ল্যাব পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সেখানে সেখানে দেখা গিয়েছে রেশনের গুণগত মান নিয়ে কোন সমস্যা নেই। এছাড়া এদিন ইডি আদালতে জানিয়েছে চুরির এফআইআর থেকে তদন্ত শুরু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ক্রমে তারা রেশন নিয়ে বড় দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছে। ইডি আধিকারিকরা জানান রেশন ডিলার থেকে শুরু করে উপর এবং নিচু মহলের সকলেই এই কাজের সাথে জড়িত। তাই কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। এই কারণেই একে সাধারণ চুরি বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: নতুন বছরেই শিক্ষকদের জন্য বড় সুখবর
এদিন ইডির আইনজীবী উদাহরণ হিসেবে বলেছেন পাঁচ পয়সা চুরি করতে করতে একসময় তা বড় দুর্নীতির আকার নেয়। এক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। প্রত্যেক উপভোক্তাদের কাছ থেকে অল্প পরিমাণ রেশন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ওই সামান্য ঘাটতির জন্য কেউ আর অভিযোগ দায়ের করেননি। আর কোন কোন ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের হলেও সেই সংক্রান্ত এফআইআর ইডিকে দেওয়া হয়নি বলেই বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী।
একইসাথে এদিন ইডির আইনজীবীর দাবি রেশন দুর্নীতির এই গোটা বিষয়টি কেউ একজন শক্তিশালী ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করছেন, তা না হলে এত বড় দুর্নীতি এক সুতোয় বাঁধা পড়তো না। অনেক আগেই তা ভেঙে যেত। জানা যাচ্ছে রেশন দুর্নীতির মামলার তদন্ত ইডি আধিকারিকরা শেষ থেকে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য তদন্তের ক্ষেত্রে গঙ্গাসাগর থেকে গঙ্গোত্রীর দিকে এগিয়েছেন তারা। রেশন দুর্নীতি মামলাকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করে, এই দুর্নীতির টাকাকে হিমবাহের সঙ্গে তুলনা করেছেন তাঁরা।