বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প আবাস যোজনায় (Awas Yojana) বাড়ি তৈরির সামগ্রি সরবরাহের নামে উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছিল রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে। আর এই দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে ইতিমধ্যে এই সরকারি প্রকল্পের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই রাজ্যবাসীকে বঞ্চনার হাত থেকে বাঁচাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের কোষাগার থেকেই বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ঘর তৈরির টাকা দেওয়া শুরু করেছেন গরীব অসহায় মানুষদের।
আবাস প্রকল্পে (Awas Yojana) বিরাট অ্যাকশন নবান্নের
অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, শুরু থেকেই এই বাংলার বাড়ি প্রকল্পে (Awas Yojana) উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে নবান্ন। তাই এবার উপভোক্তাদের সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আরও এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করতে এবং উপভোক্তাদের সরাসরি সহযোগিতা করতেই এবার ব্লকের বিডিওদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে এই বিষয়ে একটি চিঠির পাশাপাশি নতুন একটি এসওপি-ও পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু থেকেই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন উপভোক্তারা যেন নিজেরাই বাড়ি তৈরির কাজটি করেন, এবং এক্ষেত্রে তারা যেন কোন মধ্যস্থতাকারীর সহযোগিতা না নেন। নবান্নের নির্দেশ মেনে বাড়ি তৈরীর আগে নিজের ব্লকের মার্কেট কমিটি এবং বাড়ি তৈরির উপকরণের বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে বিডিওদের। একই সাথে সঠিক দামে, গুণগত মান বজায় রেখে ইঁট, বালি,সিমেন্ট, স্টোনচিস্টাস-এর মত উপকরণ সরবরাহ করার ব্যাপারেও নিশ্চিত করতে হবে।
দরকার হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা শাসকরা সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে সামগ্রি মজুদ এবং সরবরাহ করার ব্যবস্থা ঠিক করবেন। গত বছরের শেষে এই প্রকল্পের (Awas Yojana) মোট ১২ লক্ষ উপভোক্তাদের ব্যাংকে প্রথম কিস্তি ৬০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই টাকা পাঠানোর তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাড়ি তৈরির প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে হবে। এই কাজের অগ্রগতির ওপরেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বরাদ্দ করা হবে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাঠানোর পর তিন মাসের মধ্যেই পুরো বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে।
আরও পড়ুন: বেসরকারি নয়, সরকারি স্কুলেই আগ্রহ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়াদের! কেন্দ্রের রিপোর্টে উজ্জ্বল বাংলার মুখ
উপভোক্তারা যাতে কোন রকম হয়রানি ছাড়াই বাড়ি নির্মাণ শেষ করতে পারেন তার জন্য সরকার এবার মধ্যস্বত্বভোগীমুক্ত পদ্ধতি চালু করে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিচ্ছে। আবাস প্রকল্পে (Awas Yojana) নির্মাণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার জন্য জেলা ব্লক এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রত্যেক মাসে অন্তত একবার নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করার রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কাজের জন্য চালু করা হয়েছে জিও ট্যাগিং ব্যবস্থা। এর ফলে বাড়ি নির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ের প্রকৃত তথ্য পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে পঞ্চায়েত দপ্তর।
কড়া নজরদারি চলায় বাড়ি তৈরীর প্রকল্পে যেমন উপভোক্তারা দ্রুত বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন, তেমনি স্বচ্ছতার প্রশ্নেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাবে। আবাস প্রকল্পের (Awas Yojana) শুরু থেকেই নবান্নের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দলের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে এই প্রকল্প। লক্ষ্মীর ভান্ডার,কন্যাশ্রীর পাশাপাশি বাংলার বাড়ি প্রকল্পকে হাতিয়ার করেই গ্রামীণ জনতার কাছে বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেওয়াই রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কোনো রকম হয়রানি ছাড়া উপভোক্তারা যাতে সঠিকভাবে বাড়ি তৈরী করতে পারেন সেদিকে নজর রেখেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও।