বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে আবাস যোজনার (Awas Yojana) ক্ষেত্রে ‘একলা চলো নীতি’ অনুসরণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (Government of West Bengal)। গত ডিসেম্বর মাসে রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা পাঠিয়েছে রাজ্য। আগামী তিন মাসের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু তার আগেই ফাঁপরে পড়েছেন বেশ কিছু আবাস-প্রাপক।
কী সমস্যায় পড়লেন আবাস যোজনার (Awas Yojana) গ্রাহকরা?
জানা যাচ্ছে, আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যে আবাস যোজনার গ্রাহকদের বাড়ি তৈরির কাজ সম্পন্ন করে ফেলার কথা। তবে বালির দাম (Sand Price) হু হু বাড়তে থাকার কারণে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। এমতাবস্থায় বালিঘাটের ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন জেলা প্রশাসন। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বালির দাম।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পূর্ব বর্ধমানে বাংলার আবাস যোজনার (Awas Yojana) গ্রাহক সংখ্যা ৭৯,৩০৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৭৫,০০০ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে সরকারের তরফ থেকে বাড়ি নির্মাণের প্রথম কিস্তির টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকে ইতিমধ্যেই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু এই আবহে বালির দাম নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বহু মানুষ। বাড়ির কাজ যদি আটকে যায় তাহলে একদিকে যেমন দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া যাবে না। তেমনই সরকার নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে বাড়িও তৈরি করতে পারবেন না।
এই বিষয়ে আবাস যোজনার উপভোক্তাদের একাংশের দাবি, প্রত্যেক ঘনফুট বালির জন্য ২১ টাকা করে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। অথচ বাজার থেকে বালি কিনতে খরচ হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা/ঘনফুট। এই নিয়ে বিডিওর কাছে তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন। আবাস (Awas Yojana) প্রাপকদের একাংশের কথায়, বালির বেশি দামের জন্য বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করতে পারছি না। এই রকম হলে বাড়ি তৈরির খরচের অর্ধেক বালি কিনতেই চলে যাবে।
আরও পড়ুনঃ এই নথি না দেখালে মিলবে না জল-বিদ্যুতের সংযোগ! বেআইনি নির্মাণ রুখতে এবার আরও কড়া পদক্ষেপ
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘বালিঘাটের ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিডিও-রা। বালির আকাল থাকার কোনও অভিযোগ নেই। বালির দাম কমতে শুরু করেছে’। বিডিও (গলসি) মৈত্রেয়ী ভৌমিক বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আবাস যোজনার গ্রাহকরা যাতে সঠিক মূল্যে বালি পান সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে’।
এদিকে জানা যাচ্ছে, বালিঘাটের ইজারাদারদের সঙ্গে ব্লক প্রশাসনের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে, প্রত্যেক ঘনফুট বালির মূল্যে যাতে কিছুতেই ২০-২৫ টাকার বেশি না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হবে। এক একজন উপভোক্তা ৬০০ ঘনফুট বালি কিনতে পারবেন। প্রশাসনের তরফ থেকে বালির দাম নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও উপভোক্তারা এই দামে বালি পাবেন কিনা তা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
বালিঘাটের ইজারাদারদের একাংশের কথায়, ৪০ হেক্টর অঞ্চলে ৫ বছর বালি (Sand) তুলতে ১৫০ কোটি টাকা দিতে হবে। এছাড়া বালি বিক্রয়ের পর রাজস্ব দিতে হয়। সেই সঙ্গেই আরও নানান খরচ রয়েছে। এই কারণে বালির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ট্র্যাক্টর চালকদের একাংশের কথায়, ‘বিগত ২-৩ মাস ধরে বালি নিয়ে প্রশাসনের কড়াকড়ি চলছে। নদীর যেখানে সেখানে বালি পাওয়া যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট ইজারাদারদের থেকেই বালি কিনতে হচ্ছে। সেই জন্যই দামে কোনও বাঁধন নেই’।
এদিকে হু হু করে বালির দাম বাড়তে থাকায় ফাঁপরে পড়েছেন আবাস যোজনার (Awas Yojana) গ্রাহকরা। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে দাম বেঁধে দেওয়া হলেও তা কতখানি কার্যকর হবে তা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।