অবশেষে গলল বরফ! তিস্তার উপরে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে সায় দিলেন মমতা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বাংলায় ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই একটা নীতিতে বরাবরই অনড় থেকেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সরকারি প্রকল্পের জন্য কখনওই জোর করে জমি দখল করার পক্ষপাতী নন তিনি। এই কারণেই তিস্তার ওপর বিকল্প সেতু নির্মাণ করার ব্যাপারে বারবার সময় নিচ্ছিল নবান্ন। আসলে তিস্তা নদীর ওপর বিকল্প সেতু নির্মাণ করতে গেলে বহু মানুষকে উচ্ছেদ করতে হতে পারে। এই কারণেই করোনেশন ব্রিজের বিকল্প ব্রিজ তৈরি করতে বারবার সময় নিচ্ছিল নবান্ন।

তিস্তার উপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে সায় দিলেন মমতা (Mamata Banerjee)

অবশেষে ভারত-চীন সীমান্তে বাড়তে থাকা ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই মত পাল্টালো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তিস্তার উপর নির্মিত করোনেশন ব্রিজ উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার লাইফ লাইন। ভারতীয় সীমান্তের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম হোক অথবা সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ এই পথেই যায়। গত কয়েক বছর ধরেই অরুণাচল প্রদেশের ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এবার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে পরিকাঠামো বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই এবার জাতীয় স্বার্থে তিস্তা নদীর উপর বিকল্প সেতু বানানো অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।

পূর্ত দপ্তর সূত্রে খবর ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ার কারণেই এবার তিস্তা নদীর উপর দ্বিতীয় বিকল্প সেতু নির্মাণ কার্যে সায় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সূত্রের খবর এই নতুন সেতু নির্মাণ কার্যে আনুমানিক খরচ হবে প্রায় ১১০০ কোটির কিছু বেশি টাকা। ইতিমধ্যেই এই টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নবান্নের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর এবার ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হবে।

১৯৩৭ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানি এলিজাবেথের অভিষেক স্মরণে এই করোনেশন ব্রিজটি তৈরী করা হয়েছিল। এই ব্রিজের নির্মাণকার্য সম্পন্ন হয়েছিল ১৯৪১ সালে। তখনকার দিনে এই ব্রিজ নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল মোট ৪ লক্ষ টাকা। তৎকালীন বেঙ্গল গভর্নর জন অ্যান্ডারসন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

স্থানীয়দের কাছে এই ব্রিজটি  ‘বাঘপুল’ নামে পরিচিত। কারণ এই ব্রিজের এক প্রবেশপথে দুটি বাঘের মূর্তি স্থাপিত রয়েছে। আজও এই ব্রিজটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডকে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার সঙ্গে বাংলার বাকি অংশের সংযোগ এই ব্রিজের মাধ্যমে হয়। প্রয়োজনীয় সামগ্রী পরিবহন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চলাচল এই ব্রিজের উপর নির্ভরশীল।

আরও পড়ুন: বাংলার আবাসে তৈরী হবে ১২ লক্ষ বাড়ি! এরই মধ্যে কড়া নির্দেশ দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

যদিও বয়সের ভার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্রিজটি এখন অত্যন্ত জীর্ণ হয়ে পড়েছে। ২০১১ সালে ৬.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের পর ব্রিজটিতে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছিল। এরপর থেকেই ব্রিজের অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। ব্রিজের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল পাঠানো হয়েছিল। তারা জানায়, ব্রিজের মাঝখানে প্রায় আড়াই ফুট দীর্ঘ ফাটল রয়েছে। এরপর এই ব্রিজের ওপর দিয়ে ১৮ হাজার টনের বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও বাস্তবে এই নিষেধাজ্ঞা খুব একটা মেনে চলা হয় না।

Mamata Banerjee

দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি সাংসদ রাজু বিস্তা ও জয়ন্ত রায়ও নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন।  কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকড়ির সঙ্গে কিছুদিন আগেই সাক্ষাৎ করে রাজু বিস্তা এই ব্যাপারে জোরালো দাবি করেছিলেন। পরে তিনি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রক বিকল্প সেতু নির্মাণের  অনুমোদন দিয়েছে। তবে জমি রাজ্য সরকার ও রেলের আওতায় থাকায় কাজ শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে। দুই সরকারের মধ্যে এই টানাপোড়নের জেরে  এখনও করোনেশন ব্রিজটি প্রতিদিন হাজার হাজার টন যানবাহন ও পণ্য পরিবহনের ভার বহন করে চলেছে। তাই সেদিক দিয়ে এই নতুন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে ।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর