কে হবেন বঙ্গ BJP-র রাজ্য সভাপতি? জল্পনার মাঝেই ফর্মুলা বদলে ফেলল দিল্লি

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। এখন থেকেই নির্বাচনকে সামনে রেখেই কোমর কষেছে রাজনৈতিক দলগুলি। বিশেষ করে এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বঙ্গ বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি পদ। আগামী দিনে কে এই পদে বসবেন? তা নিয়েই চলছে বিস্তার জল ঘোলা। এবার যত দ্রুত সম্ভব এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বিজেপি। কিন্তু দিল্লিকে ভাবাচ্ছে দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ। তাই সূত্রের খবর, সব দিক বিবেচনা করেই এবার বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি বেছে নেওয়ার ফর্মুলা বদলে ফেলেছে দিল্লি। সূত্রের খবর আপাতত সর্ব-সম্মতি নয় অনাপত্তিতেই আস্থা রাখছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

বঙ্গ বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি বাছতে এবার নতুন ফর্মুলা

বিজেপিতে (BJP) সভাপতি বদলের সাথে সংগঠনেও আমূল পরিবর্তন চলে আসে। দলে যে নেতা বা নেতৃবর্গ নতুন ক্ষমতাসীন হয় তাঁর বা তাঁদের বেছে নেওয়ার টিমের হাতেই সব স্তরের দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয়। আর এক্ষেত্রে বিজেপি নেতারা কোন অস্বাভাবিকতাও দেখেন না। কারণ এক্ষেত্রে তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘যার উপর দলের সাফল্য বা ব্যর্থতার দায় বর্তাবে, তাঁকে তো  তাঁর টিম বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতেই হবে। ক্যাপ্টেন যদি পছন্দমতো টিম বানাতে না পারে তাহলে ম্যাচ জেতা তো কঠিন হবেই।’

বিজেপির (BJP) সাংগঠনিক সেই ফর্মুলা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বদলে যাবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। এই মুহূর্তে তাই নতুন করে ছন্দপতন ঘটলে তা কাটিয়ে উঠে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দল প্রস্তুত হতে পারবে কিনা তা নিয়ে আরও বাড়ছে দুশ্চিন্তা। বঙ্গ বিজেপিতে আপাতত যারা শীর্ষ নেতৃত্ব বলে পরিচিত তাঁদের পারস্পরিক সমীকরণের কথা অজানা নয় কারও। কিন্তু টানপোড়েন থাকলেও পরস্পরের সঙ্গে কাজ করতে এখন তারা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা দুই সর্বোচ্চ নেতা সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে একে অপরের সঙ্গে কাজ করছেন। সাংগঠনিক গতিবিধির শীর্ষে যে নেতা তিনি ওই পদে এসেছেন তারও এক বছর আগে। অর্থাৎ গত তিন বছর ধরে তিনিও সুকান্ত-শুভেন্দুর সঙ্গে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেছেন।

দলের একাংশের বক্তব্য সম্পর্কের সমীকরণ যেমনই হোক নেতাদের দীর্ঘ সহাবস্থানের সুবাদে সংগঠনে একটা স্থিতাবস্থা অন্তত এসেছে। তাই ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে সেই ‘স্থিতাবস্থা’ যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেই নজর রাখছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।  শীর্ষ স্তরে রদবদল হলেও গোটা সাংগঠনিক কাঠামোকে ওলট-পালট করে দিতে রাজি নয় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু এখন তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাই তাঁকে সভাপতিত্বের পদে বহাল রাখা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে কঠিন। প্রথমত বিজেপি ‘এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি’তে বিশ্বাসী, দ্বিতীয়ত দিল্লির মন্ত্রিত্ব এবং বাংলার মতো কঠিন জমিতে দলের সভাপতিত্ব  একসাথে সামলানো অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন। একইভাবে শুভেন্দুর ক্ষেত্রেও বাঁধা হতে পারে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি’। কারণ তিনি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। তাই পরবর্তী রাজ্য সভাপতি পদে চর্চায় উঠে আসছে একাধিক নাম।

আরও পড়ুন: বিপদ বাড়ছে সন্দীপের! R G Kar আর্থিক দুর্নীতি মামলায় বড় পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের

বিজেপি (BJP) সূত্রে খবর এক্ষেত্রে ইতিমধ্যে রাজ্যের শীর্ষ নেতদের তরফে তিনটি নাম জমা পড়েছে দিল্লিতে। বঙ্গ আরএসএসের পছন্দ হিসেবেও পৌঁছেছে আরও একটি নাম। পাশাপাশি নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ রয়েছে দিল্লির-ও। তবে সূত্রের খবর বাংলা থেকে যে নাম প্রস্তাবিত হয়েছে তার মধ্যে একটি নাম বাদ পড়েছে শুরুতেই। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেদের কারও কারও ভাবনায় আবার রয়েছে এক দিল্লীবাসী বাঙালি নেতার নাম। কিন্তু সব কটি নামের ক্ষেত্রেই ‘সর্বসম্মতি’ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এবার বাংলায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফর্মুলা বদলে ফেলছে দিল্লি। কারণ তাঁরা বাংলায় এই পদের জন্য এমন কাউকে বাছতে চাইছেন না যাতে দলের পক্ষ থেকে পরে অভিযোগ আসে। তাই পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী সভাপতির নাম ঘোষণা করার আগে দশবার ভাবছে কেন্দ্র।

Suvendu Adhikari Sukanta Majumdar are going to Delhi for meeting on Friday

সবদিক বিবেচনা করেই এবার সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘অনাপত্তি ফর্মুলা’ আনছে দল। এক্ষেত্রে তাঁরা এমন কারও নাম পছন্দের তালিকায় রাখছেন যাঁর নাম কারও পছন্দের তালিকায় না থাকলেও, আপত্তির তালিকাতেও নেই। এছাড়াও বঙ্গ বিজেপির (BJP) লবি আবর্তিত হয় যে চার-পাঁচজনকে ঘিরে তাঁদেরও  কারও আপত্তি থাকবে না এমন দুটি নাম পাওয়া গিয়েছে। তবে তাঁদের কতটা গুরু দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেই বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমান স্থিতাবস্থা যদি বদলাতে হয় তাহলে বাংলায় সভাপতি বাছতে হবে ‘অনাপত্তি’ বা ‘নো অবজেকশন’-এর ভিত্তিতেই। সেই সাথে আশংকা রয়েছে নতুন সভাপতি নিজের টিম বাছতে গিয়ে যদি সদ্য তৈরি টিম গুলিকে বাতিল করে, তাহলে নির্বাচনের আগে আবার এলাকায় নতুন নতুন ‘লবি’ তৈরি হতে পারে।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর