বাংলা হান্ট ডেস্ক: চিনের কৌশল মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপের জন্য অত্যন্ত সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ভারত (India)। চলতি মাসের শুরুতেই বাজেটে মলদ্বীপের জন্য ভারত আর্থিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এমতাবস্থায়, বিশেষজ্ঞরা ওই অঞ্চলে চিনের প্রভাবকে পিছনে ফেলে দেওয়ার জন্য এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামনে আসা ২০২৫-এর জন্য ভারতের জাতীয় বাজেটে মলদ্বীপের উদ্দেশ্যে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যা গত বছরের ৪৭০ কোটি টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায়ও এটি সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বড় পদক্ষেপ ভারতের (India):
ভারত গত বছর বাজেট কমিয়েছিল: যদিও, ভারত (India) গত বছর তার বাজেটে মলদ্বীপের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে মালদ্বীপের মন্ত্রীদের অশালীন মন্তব্য কূটনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়। এর পরে, ভারত আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে ৪৭০ কোটি টাকা করে.
মুইজ্জু দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্পর্কের অবনতি ঘটে: জানিয়ে রাখি যে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে মোহাম্মদ মুইজ্জুর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সাথে সাথে ভারতের (India) সাথে মলদ্বীপের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। চিনপন্থী মোহাম্মদ মুইজ্জু নির্বাচনের আগে “ইন্ডিয়া আউট” ক্যাম্পেন শুরু করেছিলেন। এদিকে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মুইজ্জু মালদ্বীপে উপস্থিত ভারতীয় সেনা আধিকারিকদের তাঁর দেশ ছাড়তে বলেন। ওই সামরিক আধিকারিকরা ভারত থেকে উপহার পাওয়া একটি ডর্নিয়ার বিমান এবং দু’টি হেলিকপ্টার পরিচালনা করতেন। তাঁদের পরিবর্তে ভারত অসামরিক কর্মী মোতায়েন করে।
ভারতের পরিকল্পনা: ওয়াশিংটনের ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের অ্যাডজান্ট ফেলো নিলান্থি সমরানায়েক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেছেন যে, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ভারত ও মলদ্বীপ সম্পর্ক উন্নয়নে সফল হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের ওপর সবার আগে ভারতের দৃষ্টি নিক্ষেপের বিষয়টি এবং নমনীয়তাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি কাজে এসেছে। ভারত অসামরিক অপারেটরদের মাধ্যমে তার বিমান উপস্থিতি বজায় রেখেছে। অন্যদিকে মলদ্বীপের নতুন প্রশাসন বিদেশি সামরিক উপস্থিতি অপসারণের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।
আরও পড়ুন: এবার আরও বাড়বে ধোনির আয়! বড় পদক্ষেপ নিলেন মাহি
ধৈর্য এবং কৌশলগত দূরদর্শিতা: বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ তথা দিল্লিতে একটি স্বতন্ত্র থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা রবিন্দর সচদেব, জানিয়েছেন যে, ভারত (India) মলদ্বীপের জন্য একটি “নর্থ স্টার” ও একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য মিত্র। তিনি জানান যে, ভারত স্বল্পমেয়াদী অস্থিরতার প্রতিক্রিয়া না দিয়ে ধৈর্য এবং কৌশলগত দূরদর্শিতার নীতি নিয়ে এগিয়েছে। সচদেব আরও জানান, চিনা বিদেশনীতি বিশ্বব্যাপী বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও ধৈর্যশীল দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কাজ করে। মলদ্বীপের ক্ষেত্রে, ভারত তাৎক্ষণিক ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে অপেক্ষা করে এবং চিনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথকেই বেছে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টাটা গ্রুপের এই কোম্পানি করল বাজিমাত! হল ৪৯৬ কোটির মুনাফা, তবুও মাথায় হাত বিনিয়োগকারীদের
ট্র্যাকে ফিরেছে মলদ্বীপ: বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মুইজ্জুর সাম্প্রতিক অবস্থান এটাই স্পষ্ট করে যে মলদ্বীপ এখন বুঝতে পারছে যে নির্বাচনী ক্যাম্পেনের সময়ে ভারতকে (India) যেভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছিল ভারত আদৌ সেইরকম “শত্রু” নয়। এই কারণেই মলদ্বীপ এখন ট্র্যাকে ফিরে আসছে এবং আরও আশা নিয়ে নয়াদিল্লির দিকে তাকিয়ে আছে। অপরদিকে, নয়াদিল্লিও আত্মবিশ্বাসী যে মলদ্বীপের সাথে তার গভীর ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক শুধু টিকে থাকবে না, বরং ওই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকেও ছাড়িয়ে যাবে।