স্বদেশে লাঞ্ছিত “বঙ্গবন্ধু”, অথচ ৭৭ বছর ধরে মুজিবের স্মৃতি আগলে রেখেছে কলকাতা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অথচ আজ স্বদেশেই নিশ্চিহ্ন হতে বসেছেন মুজিবুর রহমান। আজকের বাংলাদেশের গঠনে তাঁর অবদান সারা বিশ্বে স্বীকৃত। কিন্তু ‘নতুন’ বাংলাদেশ কার্যত তাঁর স্মৃতি মুছে ফেলতে মরিয়া। ‘বঙ্গবন্ধু’র ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি বুধবার রাতেই আক্রান্ত হয় একদল উন্মত্ত জনতার হাতে। সেদিন থেকে এখনো পর্যন্ত চলছে ভাঙচুর, লুঠতরাজ। পদ্মা পারে যখন মুজিবের অস্তিত্ব বিপন্ন, সেখানে গঙ্গা পারে (Kolkata) চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর এক চিলতে স্মৃতিও সযত্নে রক্ষিত রয়েছে এপারে।

কলকাতার (Kolkata) সঙ্গে যোগ বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুর

মধ্য কলকাতার (Kolkata) ঘিঞ্জি স্মিথ লেনের বেকার হস্টেল। দীর্ঘ ১১৪ বছরের পুরনো এই বাড়ির সঙ্গেই জড়িয়ে মুজিবুর রহমানের স্মৃতি। এই হস্টেলেই কেটেছে তাঁর জীবনের ৫ টি বছর। তখনও অবশ্য ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি তিনি। তবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছিল। ১৯৪১ সালে তরুণ মুজিব ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় (Kolkata) এসেছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। পরাধীন ভারতের ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন তিনি।

Sheikh mujibur rahman has connection with Kolkata

কোথায় থাকতেন মুজিব: গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন করতেন মুজিবুর। তবে কলকাতায় (Kolkata) তাঁর পরিচিতি গড়ে ওঠেনি তখন। কলেজ ছাত্র মুজিবুর সে সময় আশ্রয় নিয়েছিলেন বেকার হস্টেলের ২৪ নম্বর ঘরে। সেখানে সযত্নে রক্ষিত তাঁর ইতিহাস। তার আগেও অবশ্য স্কুলে পড়ার সময় একাধিক বার কলকাতায় (Kolkata) এসেছিলেন মুজিব। তাঁর চোখের অপারেশন হয়েছিল মেডিকেল কলেজে। কলকাতার সঙ্গে নিবিড় যোগ তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল।

আরো পড়ুন : পাত্তা পেল না ইউনূসের হুঁশিয়ারি! মুজিবের ধ্বংস হওয়া বাড়ি থেকে ইট-লোহা লুট জনতার

মুজিবের রাজনৈতিক যোগ: ১৯৩৯ সালে কলকাতাতেই (Kolkata) সুহরাবর্দীর সান্নিধ্যে আসেন মুজিব। তারপর গোপালগঞ্জে গিয়ে গড়ে তোলেন মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন। কলকাতায় (Kolkata) কলেজে পড়ার সময় লীগের ডাকে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনে। নিজের অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে মুজিব লিখেছেন, ‘ইসলামিয়া কলেজই ছিল বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র’। এই কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন তিনি। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ৪৩ এর দুর্ভিক্ষের ত্রাণকার্যে। ততদিনে ইসলামিয়া কলেজে বেশ জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছিল মুজিবুর রহমানের।

আরো পড়ুন : জগদ্ধাত্রীকে টপকে হু হু করে এগোলো ‘কথা’, “TRP টপার’ হতে নয়া ভিলেনের এন্ট্রি সিরিয়ালে!

সেদিনের বেকার হস্টেল আজ মৌলানা আজাদ কলেজের ছাত্রাবাস। এখানেই ২৩ নম্বর ঘরে ১৯৯৮ সালে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ’। ২০১১ সালে ঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর একটি আবক্ষ মূর্তিও বসানো হয়। পরে সেই মূর্তিটি সরিয়ে বসানো হয়েছিল নতুন মূর্তি। ২৩ এবং ২৪ নম্বর ঘরে দীর্ঘ ৭৭ বছর ধরে সংরক্ষিত শেখ মুজিবের স্মৃতি। বাংলাদেশে যখন বঙ্গবন্ধুর শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যেতে বসেছে, সেখানে কলকাতা আজো যত্নে ধরে রেখেছে ইতিহাস।

Niranjana Nag
Niranjana Nag

নীরাজনা নাগ, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। নারুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে স্নাতক পাশ করার পর সাংবাদিকতার সফর শুরু। বিগত ৫ বছর ধরে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর