বাংলা হান্ট ডেস্কঃ জানুয়ারি মাসের শুরুতেই স্যালাইন কাণ্ডে (Saline Incident) উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচারের পর একইদিনে পাঁচ জন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ ওঠে, ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। আগেই এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এর জেরে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ডও করা হয়। মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ফের এই নিয়ে মুখ খোলেন তিনি।
স্যালাইন কাণ্ডে কী বললেন মমতা (Mamata Banerjee)?
মেদিনীপুর মেডিক্যালের স্যালাইন বিতর্কের জল ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট অবধি গড়িয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই এই ঘটনায় রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্য (Government of West Bengal)। সেখানে দাবি করা হয়েছে, হাসপাতালে সরবরাহ করা স্যালাইনে কোনও ভেজাল অথবা দূষণ ছিল না। গতকাল কার্যত একই সুর শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায়।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতিদের অসুস্থ হয়ে পড়ার এই ঘটনার পর ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইনের গুণমান নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। সেই স্যালাইন ব্যবহারের কারণেই কি এই অঘটন? প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়ায় স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা। গতকাল বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বুঝিয়ে দেন, ওই ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারের ‘অসতর্কতা’ দায়ী নয়।
আরও পড়ুনঃ হু হু করে বাড়বে উপার্জন! আয় বাড়াতে বিরাট উদ্যোগ সরকারের
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনও ওষুধ হাসপাতালে পাঠানোর আগে দু’টি ল্যাব থেকে তার গুণমান পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালে সরবরাহ করার পরেও সেগুলি ব্যবহারের পূর্বে ‘র্যান্ডম স্যাম্পল’ ফের দু’টি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। দুই ক্ষেত্রেই একটি ল্যাব থাকে ন্যাশানাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিজ এবং অন্যটি থাকে রাজ্যের স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি।
রাজ্যের তরফ থেকে ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ কিংবা অন্য কোনও স্যালাইন কেনার পর কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা হয় সেটাও এদিন বিধানসভায় জানান মমতা (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, যে কোনও সংস্থা থেকে ওষুধ কিংবা স্যালাইন কেনার পর প্রত্যেকটি ব্যাচ থেকে স্যালাইন অথবা ওষুধের নমুনা দু’টি আলাদা ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয়। দুই জায়গা থেকে যথাযথ শংসাপত্র পাওয়ার পরেই সেগুলি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও ল্যাবের থেকে দেওয়া শংসাপত্র দেখেই সেগুলি গ্রহণ করা হয়। এরপরেও তা সরাসরি রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয় না। তার আগে ফের পরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয়বারের রিপোর্ট ঠিক আসলেই সেই স্যালাইন অথবা ওষুধ রোগীকে দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মেদিনীপুর মেডিক্যালের (Medinipur Medical College) ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’এর ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি। ল্যাবে ওষুধ পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, তার গুণমানে কোনও খামতি ছিল না। হাসপাতালে সঠিক মানের স্যালাইনই পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যের তরফ থেকে ওষুধের গুণমান বজায় রাখতে কড়া প্রোটোকল রয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ না করলে কিংবা কোনও চক্রান্ত ছাড়া সরকারি হাসপাতালে খারাপ মানের ওষুধ সরবরাহ অসম্ভব! স্যালাইন বিতর্কে গতকাল এমনটাই দাবি করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যে পাঁচ জন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জন এখনও সম্পূর্ণ ঠিক হননি। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। মমতা (Mamata Banerjee) জানান, সম্প্রতি তিনি নিজে গিয়ে ওই দু’জন প্রসূতির সঙ্গে দেখা করে তাঁদের খোঁজখবর নিয়ে এসেছেন। অসুস্থ সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে দেখতে যখন এসএসকেএমে গিয়েছিলেন, সেই সময়ই ওই দু’জন প্রসূতির সঙ্গে দেখা করে আসেন মুখ্যমন্ত্রী।