বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে রাজ্যকে তীব্র ভর্ৎসনা কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। মঙ্গলবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে মথুরাপুরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংক্রান্ত একটি মামলা শুনানির জন্য উঠেছিল। সেই মামলাতেই রাজ্যকে (West Bengal Government) প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে হাইকোর্ট।
ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘রাজনৈতিক ইচ্ছা ছাড়া আমলারা কাজ করতে পারেন না। ভক্তি ছাড়া রথ টানা খুব মুশকিল। আপনাদের নিয়োগ সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তন করতে হবে। মানুষই আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, কিছু ফিরিয়ে দেওয়াটা আপনাদেরর দায়িত্ব’।
এদিন মামলার শুনানিতে রাজ্যের উদ্দেশে ক্ষোভপ্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই আপনারাই পার্ক স্ট্রিটের আলোকসজ্জা নিয়ে গর্ব করেন। আর এদিকে এই হাসপাতাল ভগ্নপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। পাইপ ভেঙে গিয়েছে। এতটা অপরিচ্ছন্ন চত্বর। মানুষকে কেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস ধরতে হয়?’ প্রশ্ন ক্ষুব্ধ বিচারপতির।
প্রসঙ্গত, হাসপাতালকে জমি দেওয়া এবং আনুসঙ্গিক বিষয়টি নিয়ে মামলার শুনানি ছিল। এদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শয্যা ব্যবস্থা আবেদনকারীর আইনজীবী প্রশ্ন তুললে চিফ জাস্টিস বলেন, ‘চন্দননগরে কোনও মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল নেই। পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদে গেলে দেখবেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কী অবস্থায় আছে।’ তুলনা টেনে বিচারপতি বলেন, “একবার আমার হোমটাউনে ( চেন্নাই) আসুন, চিকিৎসকরা কী করে দেখুন।”
ক্ষোভপ্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, ‘১৯৭৬-এ যেখানে ১০টি শয্যা ছিল, ২০২৫-এ এসেও স্বাস্থ্য সচিব বলছেন এই সংখ্যাই নাকি ঠিক। একমাত্র নির্বোধই এই যুক্তিতে বিশ্বাস করবে। রাজ্যে হাসপাতাল তৈরি না করলে, সুবিধা না দিলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যাবে। গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা না পেয়ে এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটে বেড়াতে হয়।’
বিচারপতির কথায়, “সুন্দরবনের মানুষরা একমাত্র নৌকার ভরসায় যাতায়াত করেন। সেখানে পনেরো কুড়ি দিনের শিশুকে কিভাবে আনা সম্ভব? সাধারণ মানুষের কথা ভেবে একটুকু কি কাজ করতে পারেন না?” চিফ জাস্টিস বলেন, “অন্তত ৫০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করুন যেখানে কন্ট্রাকচুয়াল নার্স নিয়োগ করবেন না। তাদের ভদ্রস্থ কিছু বেতন দিন। মাত্র ছয় হাজার বেতনে কাজ করাচ্ছেন তাদের দিয়ে ! কী হবে এখানে?”
আরও পড়ুন: বিকেল থেকে টানা বৃষ্টি কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে, তড়িঘড়ি হলুদ সতর্কতা জারি করল আবহাওয়া দপ্তর
রাজ্যজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘বেহাল’ দশা নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মানুষ মরছে, মরতে দাও, তাতে আপনাদের কী! আপনাদের চিন্তা কেবল ভোট নিয়ে, ভোটারদের নিয়ে নয়। আপনারা সুন্দরবনের মধুর GI ট্যাগ নিয়ে গর্ব করেন। সেটা সংগ্রহ করতে কতটা কষ্ট হয় সেটা জানা আছে? হয়তো মনে করেন যে এরা চলে গেলে মধু কে সংগ্রহ করবে। হুইলচেয়ার দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দিতে হচ্ছে, এটা খুবই লজ্জাজনক’। ৪ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি।