বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বঙ্গ রাজনীতিতে আইপ্যাক এর ভূমিকা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা চলছে বিগত কিছুদিন ধরে। সম্প্রতি নবান্নে গিয়ে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সাথে বেশ কিছুক্ষণের বৈঠক সেরেছেন আইপ্যাকের অন্যতম প্রধান কর্তা প্রতীক জৈন। তারপর রাজনৈতিক মহল থেকে অনেকেরই প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। এবার মুখ খুললেন তৃণমূল নেতা কল্যাণ বান্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)।
আই-প্যাকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক কল্যাণ বান্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)
ইতিপূর্বে আইপ্যাক সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেও শেষ পর্যন্ত চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েছিলেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। এবার একই বিষয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা রাজ্যের দাপুটে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। ‘দ্য ওয়াল’ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই পোড় খাওয়া নেতা এদিন স্পষ্ট জানিয়েছেন আইপ্যাক অসৎ, টাকার বিনিময়ে তারা অনেককে পদ দিয়েছেন। সেই টাকায় রাতভর ফুর্তি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের যোগ্যতা বিচারের জন্য এমন ঠিকাদার চাই না।’ আই-প্যাক নিয়ে সামগ্রিক মূল্যায়ন প্রসঙ্গে এদিন এমনই মন্তব্য করলেন তিনি।
বুধবার নবান্নে আইপ্যাক কর্তা প্রতীক জৈনের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের কথা উঠতেই এদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) সাফ বলেছেন, ‘দিদি কার সাথে, কী নিয়ে মিটিং করছেন, তা বলতে পারব না। কোনও কমেন্টও করব না।’ এরপরেই আই-প্যাক নিয়ে সামগ্রিক মূল্যায়নের প্রসঙ্গ উঠতেই তীব্র অসন্তোষ ধরা পড়ল তাঁর গলায়। কোনো রাখঢাক না রেখেই কল্যাণ বললেন, ‘আই-প্যাক যে অসততা করেছে, তার গভীর প্রভাব তৃণমূলের সংগঠনের উপর পড়েছে।’
বিস্ফোরক মন্তব্য করে কল্যাণ (Kalyan Banerjee) আরও বললেন, ‘আই-প্যাক বলুন বা যাঁর নাম বলছেন, তাঁদের লোকেদের কথা বলুন, সততা নিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন রয়েছে।’ তাঁর দাবি আই-প্যাকের লোকেরা টাকার বিনিময়ে লোকাল এরিয়ায় গিয়ে যাকে-তাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দিচ্ছেন। তারপর সারারাত ধরে পার্টি চলছে।
তারপরই আইপ্যাক-কে ঠিকাদারের সাথে তুলনা করে তিনি স্পষ্ট বললেন, ‘আমার মনে হয় রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক দলের মতো কাজ করবে। তারা তাদের নেতৃত্বের অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী কে কোথায় যোগ্য তা ঠিক করবে। যোগ্য-অযোগ্য ঠিক করতে কোনও কনট্রাক্টর বা ঠিকাদারের দরকার হয় না। যেখানে কনট্রাকটার ঢোকে, সেখানেই কোরাপশন বা দুর্নীতি বেশি।’ একইসাথে এদিন আইপ্যাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও অভিযোগ তুলেছেন কল্যাণ (Kalyan Banerjee)। প্রসঙ্গত উনিশের লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে ডালপালা মেলতে শুরু করেছিল পদ্ম শিবির। তাই তৃণমূলের সেই বিপর্যয়ের দিনে অভিষেকের হাত ধরেই রাজ্যে আইপ্যাকের আগমন ঘটেছিল। তাই অনেকেই মনে করেন আইপ্যাক মানেই অভিষেক বান্দ্যোপাধ্যায়। এপ্রসঙ্গে কি মত কল্যাণবাবুর?
আরও পড়ুন: নিজের হাতে স্ত্রীকে খুন! ৪ বছর স্বামীকে যাবজ্জীবন দিল আদালত, গোটা ঘটনা শুনলে শিউরে উঠবেন
জবাবে তিনি এদিন পরিষ্কার জানালেন, ‘আমি মনে করি না যে আই-প্যাক মানেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এসব আপনাদের ভুল ধারণা। অভিষেক যথেষ্ট বড় নেতা, ভাল নেতা। সাংগঠনিক ভাবে আমার অনেক উপরে তাঁর পদ। তিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আমি তাঁর সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে পারি না। বরং সিনিয়র হিসাবে অভিষেকের মধ্যে সম্ভাবনা দেখতে পাই। অভিষেক যে আই-প্যাক ধরে চলে, এটা আমি মনে করি না।’
এখানেই শেষ নয় আইপ্যাক তথা প্রশান্ত কিশোরকে একযোগে আক্রমণ বানিয়ে কল্যাণ এদিন বললেন, ‘আমার কথা খুব পরিষ্কার। রাজনৈতিক দল করতে গেলে প্রশান্ত কিশোরের মতো লোকের দরকার রয়েছে বলে আমি মনে করি না। সংগঠন প্রশান্ত কিশোর করেন না।’ এরপরেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বললেন, ‘ক্ষমতা থাকলে এই আই-প্যাক বা প্রশান্ত কিশোর বাংলায় কংগ্রেস বা সিপিএমের হয়ে কাজ করে জিতিয়ে দেখান। ওরা আসলে সুবিধাবাদী। উদীয়মান শক্তির সঙ্গে থেকে উঠতে চান। যারা নেতিয়ে পড়ে আছে, তাদের তোলার ক্ষমতা ওদের নেই।’