বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজনীতির অলিন্দে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের রাজনৈতিক তরজা লেগে থাকে হামেশাই। সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃণমূলের কর্মী সভার বৈঠকের পর যা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে। গতকালের ওই বৈঠক থেকেই দলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ঘর শাসনের পাশাপাশি গতকাল ওই একই মঞ্চ থেকে দেশের নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের (Gyanesh Kumar) নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার বিরুদ্ধে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে ‘নালিশ’ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari)
তৃণমূল সুপ্রিমোর অভিযোগ জ্ঞানেশ কুমার ‘বিজেপি-ঘনিষ্ঠ’ তাই ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে ওই পদে বসানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে এবার নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বিজেপি নেতার অভিযোগ মমতা সব জেনে শুনে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি করতে চাইছেন। আসলে এইভাবে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তিকে কলুষিত করতে চাইছেন তিনি।
গতকাল তৃণমূলের মহা সমাবেশ থেকে বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে মমতার অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘ঘনিষ্ঠ’। জ্ঞানেশ কুমার একসময় গুজরাটে শাহের অধীন সমবায় দফতরের সচিব পদে নিযুক্ত ছিলেন। তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমি শ্রদ্ধা করতাম। এখনও করি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার পদে কাকে বসানো হয়েছে জানেন? টোটালটাই বিজেপির লোক।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ওই অংশটুকুর ভিডিও চিঠির সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু (Suvendu Adhikari)। জানা যাচ্ছে বোঝার সুবিধার জন্য তা ইংরেজিতে অনুবাদও করে দিয়েছেন তিনি। মমতার বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকে তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আপনার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উনি বলতে চাইছেন, বিজেপি নাকি সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদে নিজেদের লোককে বসাচ্ছে।’
২০২৩ সালের নতুন আইনের কথা উল্লেখ করে, শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) লিখেছেন, ‘উনি ভাল করেই জানেন, আপনার নিয়োগ ২০২৩ সালের নতুন আইনের মাধ্যমে হয়েছে। নতুন এই আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্যানেলে থাকেন।’ মোট কথা শুভেন্দু এদিন স্পষ্ট জানিয়েছেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পদ্ধতিতেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে। একইসাথে পুরনো নিয়োগ পদ্ধতির কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন চিঠিতে। সেই কথা প্রসঙ্গেই বিজেপি নেতার দাবি সেই নিয়ম অনুযায়ীও এই পদের যোগ্য দাবিদার জ্ঞানেশ কুমার।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চাই! এবার সটান ধরনায় বসলেন কুণাল, হঠাৎ কী হল?
এখানেই শেষ নয়, শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) এদিন চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছেন,’মমতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে আপনার কাজের সময় তুলে ধরলেও, এটা উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছেন যে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব যাঁকে দেওয়া হয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সচিব পদেও তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক।’ এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর এক্তিয়ার মনে করিয়ে দিয়ে শুভেন্দু লিখেছেন,’নির্বাচন কমিশন এমন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, যা নিরপেক্ষ ভাবে আমাদের দেশের ভোটপ্রক্রিয়া পরিচালনা করে। কমিশনকে এই অধিকার ভারতের সংবিধান দিয়েছে। কিন্তু সেই কমিশনকে আক্রমণ করে সীমা ছাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করার এক্তিয়ারই ওঁর নেই।’
প্রসঙ্গত গতকাল দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজেপির জয়লাভ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। অভিযোগ করেছিলেন ভোটার তালিকায় নাকি কারচুপি করা হয়েছে। এদিন চিঠিতে সে কথাও উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু (Suvendu Adhikari)। সবশেষে এই ধরনের মন্তব্য করে জনগণের মনে উদ্বেগ তৈরী করার জন্য, এবং একইসাথে কমিশনকে অপদস্থ করার এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন শুভেন্দু।