১০০ কোটির জমি হাতানোর ছক! হাতে-নাতে ধরা পড়তেই বড় নির্দেশ দিল হাইকোর্ট 

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ভুতুড়ে ভোটার কার্ড নিয়ে এইসময় এমনিতেই উত্তাল রাজনৈতিক মহল। এরইমধ্যে এবার নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট। শিলিগুড়িতে বেআইনিভাবে জমি দখলের একটি মামলাকে কেন্দ্র করে সামনে এসেছিল একটি ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট। পরবর্তীকালে কেঁচো খুঁড়তে কেউটের মতো বেরিয়ে আসে অন্তত আরও ১০০ টি ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট। ওই ডেথ সার্টিফিকেট গুলির মধ্যেও কোনো না কোনো সমস্যা দেখা যায়। এমনকি ১০০ টি এমন ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়  এখনও পর্যন্ত যার সঠিক কোনো রেকর্ড নেই। এরপরেই প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি ওই ডেথ সার্টিফিকেটগুলি নিয়ে কোনো অসাধু কাজে ব্যবহার করার জন্য ছক কষা হয়েছিল? এই সমস্ত চাপানউতোরের মধ্যেই এবার দ্রুত ওই সমস্ত সার্টিফিকেট বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।

সত্যি ফাঁস হতেই বিরাট নির্দেশ দিল হাইকোর্ট (Calcutta High Court)

ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর বাগডোগরায় মাধব চন্দ্র মন্ডল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তারপর ২০১৩ সাল নাগাদ তাঁর জমির উত্তরাধিকার নিয়ে একটি মামলা করেন রেখা পাল নামের এক মহিলা। এই মামলা শুরু হওয়ার পর আদালতে (Calcutta High Court) বেশ কিছু তথ্য জামা পড়ে। সেখানে এমন একটি সার্টিফিকেট জমা হয় যেখানে দেখা যায় মাধবের মৃত্যু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। কিন্তু এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় বাস্তবে তাঁর মৃত্যু ২০০০ সালে হয়েছে। বাগডোগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রবীর রায়ের সই পাওয়া যায় ওই ডেথ সার্টিফিকেটে।

তাতে আরও সন্দেহ বাড়ে মামলাকারী রেখা পালের। এরপর তথ্য জানার অধিকার আইনে আসল সত্যি জানার চেষ্টা করেন তিনি এবং স্থানীয় একজন সমাজসেবী গৌতম কীর্তনীয়া। এরপর তারা স্বাস্থ্য দপ্তর সহ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকরণ দপ্তরের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেখানে জানা যায় ওই নির্দিষ্ট নম্বরের ডেথ সার্টিফিকেটের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

আরও পড়ুন: শুরু হচ্ছে কলকাতায় পাইপলাইন বসানোর কাজ! বাড়ি বাড়ি সরবরাহ হবে কবে?

সমাজসেবী গৌতম কীর্তনীয়া জানান, যখন তারা বুঝতে পারেন ডেথ সার্টিফিকেটটি ভুয়ো, তখন তাদের সন্দেহ আরও জোরালো হয়। ওই সার্টিফিকেট যে বই থেকে ইস্যু করা হয়েছিল তার আগে-পরে আরও  ১০০টি ডেথ সার্টিফিকেট কাদের এবং কী নথির ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে RTI করেন তিনি। আর এক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে একই উত্তর দেওয়া হয়।

দেরী না করে তারপরেই কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন গৌতম কীর্তনীয়া। আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে তিনি  দাবি জানান, অবিলম্বে ওই সমস্ত সার্টিফিকেট বাতিল করা হোক। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চ সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখেন এবং ডেথ সার্টিফিকেটগুলি বাতিল করার নির্দেশ দেন। একইসাথে নোটিশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসককে।

Calcutta High Court big observation in a car brake fail case

মামলাকারী জানিয়েছেন, প্রায় একশো কোটির জমি হাতাতে বানানো হয়েছিল একটি ভুয়ো সার্টিফিকেট। বাকি ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট গুলির তথ্য তাঁর জানা নেই। তবে তাঁর আশঙ্কা, পাসপোর্ট থেকে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড তৈরি করা, অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিতে, কিংবা জমি দখল করার কাজেই হয়তো এসবের ব্যবহার করা হচ্ছে। 

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর