বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কাকার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন ১২ বছরের এক নাবালিকা। অভিযোগ ছিল, বাড়ি ফাঁকা থাকলেই জোর করে ঠোঁট চেপে ধরতেন তাঁর কাকা। সে যখন খাটে বসে লেখাপড়া করতো, সেই সময় বাড়ি ফাঁকা হলে কাকা ওই বিছানায় এসে শুয়ে পড়তেন। এর ফলে তাঁর শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি হতো। গত বছরের শুরুর দিকে এই ঘটনায় পুলিশের কাছে একটি এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়। এবার সেই মামলাতেই বড় রায় দিল হাইকোর্ট (High Court)।
উচ্চ আদালতের (High Court) রায়ে বিতর্ক!
ঘটনাস্থল দিল্লি। গত বছরের শুরুর দিকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এফআইআর দায়ের হয়। সেখানে আইপিসি ৩৫৪ এবং পকসোর (POCSO) ১০ নং ধারায় ওই কাকুকে নাবালিকার ‘যৌন হেনস্থা’য় অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের তরফ থেকে ওই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরপর দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর উচ্চ আদালতের (High Court) বিচারপতি স্বর্ণকান্তা শর্মা বলেন, যৌন অভিপ্রায় যদি না থাকে, তাহলে কোনও শিশুর ঠোঁট ছোঁয়া, চেপে ধরা কিংবা তার পাশে শুয়ে থাকা পকসো আইনের অধীন পড়ে না। সেই কারণে এখানে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসোর ১০ নং ধারা প্রযোজ্য নয়। তবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ বহাল রাখেন বিচারপতি।
জাস্টিস শর্মা বলেন, যদি যৌন অভিপ্রায় না থাকে, তাহলে কিছুতেই তাকে পকসোর অধীন ফেলা যায় না। পকসোর ১০ নং ধারা ‘অ্যাগ্র্যাভেটেড সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট’এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে এক্ষেত্রে ওই নাবালিকা পুলিশ, আদালত, ম্যাজিস্ট্রেট কাউকেই বলেননি যে তার কাকু তাঁকে যৌন নিগ্রহ করেন। সে শুধু কাকুর উপস্থিতিতে তাঁর অস্বস্তি হওয়ার কথা জানিয়েছে।
হাইকোর্টের (Delhi High Court) বিচারপতির কথায়, ‘একটি মেয়ের জন্য এই ঘটনা সম্মানহানিকর হতে পারে। বলা যায় তা শ্লীলতাহানি। তবে যৌন উদ্দেশ্য না থাকায় শুধু আইপিসি ৩৫৪ (শ্লীলতাহানি) ধারায় আবেদনকারীকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে’।
তিনি বলেন, নাবালিকা মেয়েটির মা নেই। সে একটি হোমে বড় হচ্ছে। কাকার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে একাধিকবার এই ঘটনা ঘটে, যা কাম্য নয়। বিচারপতি বলেন, ‘ভালোবাসা ও নিরাপত্তার খোঁজে মেয়েটি আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিল। সেখানে যদি অভিভাবক স্থানীয় কেউ এই ধরণের আচরণ করেন, তাহলে সেটা শুধু সম্মানহানিই করে না, সেই মেয়েটির নিজের দেহের ওপর অধিকার ভঙ্গ করে এবং শ্লীলতাহানি করে। এই ব্যক্তি সেই কাজ করেছেন। তাই আইপিসি ৩৫৪-এ সাজা বহাল রাখার যথেষ্ট কারণ আছে’।
এদিকে এই নিয়ে আইনি মহলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আইনজীবীদের একাংশের প্রশ্ন, পকসোর ১০ নং ধারা ‘অ্যাগ্র্যাভেটেড সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট’এর ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি হয়তো ততখানি গুরুতর না হলেও, যৌন নিগ্রহ তো বটেই। হাইকোর্টের রায়েও ‘শ্লীলতাহানি’র উল্লেখ রয়েছে। পকসোর অন্য আরও ধারা রয়েছে। সেটা এক্ষেত্রে দেওয়া যেত। ভুল পুলিশের। তারা পকসোর সংশ্লিষ্ট ধারা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ।
আরও পড়ুনঃ মৃত্যুর তিন মাস পর মামলাকারী কলকাতা হাইকোর্টে! থ বিচারপতি
অন্যদিকে আরেকটি মহলের মতে, এই ধরণের ঘটনাকে যদি ‘যৌন অভিপ্রায়’ বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তো মেয়েদের পুরুষ আত্মীয়দের কাছে যেতেই দেওয়া যাবে না! তবে এই ঠোঁট চেপে ধরা পকসোর অধীন পড়ে যারা ভাবছেন, তাঁদের কথায়, ‘মেয়েটি তো জানিয়েছে ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাঁর অস্বস্তি হতো। সেখানে তিনি ওই মেয়েটির ঠোঁট চেপে ধরতেন। কেন সেটা গুরুত্ব পেল না?’
এই ঘটনায় নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এদিকে হাইকোর্ট (High Court) অবধি জল গড়াতেই নিম্ন আদালতকে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। বিচারপতি শর্মা বলেন, ‘আদালতগুলো কোনও কিছু ব্যাখ্যা না দিয়ে রায় ঘোষণা করে দিচ্ছে। বহুক্ষেত্রে নানান গুরুত্বপূর্ণ রায়। এটা কাম্য নয়। অনেক মানুষের জীবন তা ধ্বংস করে দিতে পারে’।