বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ওবিসি সার্টিফিকেট (OBC Certificate) নিয়ে মামলা বিচারাধীন রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এরই মধ্যে হাইকোর্টে (Calcutta High Court) নতুন করে দায়ের হয়েছে মামলা। মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতেই হাই কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়লেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হল? সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ।
অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট-Calcutta High Court
বিচারপতিদের কড়া প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয়ে ‘ভুল’ স্বীকার করে নেন মুখ্যসচিব। আদালতকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আর এমন কিছু হবে না!’’ অভিযোগ ছিল, হাই কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওবিসি শংসাপত্র ব্যবহার করে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গ কোঅপারেটিভ সোসাইটির নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ সামনে এসেছিল। এই নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়।
গত শুনানিতে এই মামলায় রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ভার্চুয়ালি আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মত মুখ্যসচিব হাজিরা দিলে হাইকোর্টের প্রশ্ন, ‘‘আমরা আমাদের নির্দেশ স্পষ্ট করে বলেছিলাম। তার পরও তা অমান্য করে কী ভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হল? রাজ্য বা মুখ্যসচিবের কী এ বিষয়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই?’’
জবাবে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘গত সেপ্টেম্বর মাসে এবং চলতি মাসেও আদালতের সমস্ত নির্দেশ সব দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ না মানার কোনও কারণ নেই। ভুল হয়েছে, সেটা স্বীকার করছি।’’ আদালতকে আশ্বাস দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মতো কোন কিছু চূড়ান্ত কিছুু করা হবে না। যেখানে যা নিয়োগ চলছে, আমরা সেখানে সব স্থগিত করে দিচ্ছি।”
মুখ্যসচিব বলেন, “আদালতের নির্দেশকেই মান্যতা দিয়ে আমরা সরকারের সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রেখেছি। ওবিসি মামলা বিচারাধীন থাকায় সেই সংক্রান্ত নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। কোথাও ভুল হয়ে থাকলে, আমরা সেটা সংশোধন করে নেব।’’ এই সময় বিচারপতি মান্থা বলেন, ‘‘২০১০ সালের আগে যারা ওবিসি শংসাপত্র পেয়েছেন, তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। আপনরা কেন আদালতের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, যে আমাদের নির্দেশের জন্যই নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ! ২০১০ সালের আগে যারা ওবিসি শংসাপত্র পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে তো স্থগিতদেশ নেই।’’
মুখ্যসচিবের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি সবচেয়ে বড় আধিকারিক। আপনার লোকেরাই আপনাকে মানছেন না। এটা আমাদের কাছে খারাপ লাগছে। আপনাকে আদালতে ডাকার বিষয়টিও দুঃখজনক। আপনার কথা না শুনলে আর কার কথা শুনবে?’’ আদালতের বক্তব্য, ‘‘যদি কেউ আপনাদের নির্দেশ না মানেন তা হলে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? অন্তত সেই অফিসারদের ডেকে তাদের থেকে নির্দেশ না মানার ব্যাখ্যা চাইবেন না? সরকার এই টুকু অন্তত করুক।’’
আদালত বলে, ‘‘ওবিসি সংক্রান্ত নির্দেশ মানার ব্যাপারে সরকারি আইনজীবী এখানে একাধিক হলফনামা দিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। অথচ রাজ্য সরকারই তার পাশে নেই?’’ প্রসঙ্গত, গত বছর মে মাসে ২০১০ সালের পর থেকে অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায় (OBC Certificate) ভুক্তদের দেওয়া সব শংসাপত্র বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া সেই রায়ে এক ধাক্কায় ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হয়ে যায়। সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার (West Bengal Government)।
আরও পড়ুন: ফের DA বাড়বে! কতটা? রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য এল বড় আপডেট
উচ্চ আদালতের সেই রায়ের বিরোধীতা করে শীর্ষ আদালতের দরবারে যায় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা চলছে। আগে রাজ্যের আইনজীবী হাইকোর্টের রায়ের উপর যাতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় সেই আর্জি জানান। তবে সুপ্রিম কোর্ট তরফে হাইকোর্টের রায়ের উপর কোনো স্থগিতদেশ দেওয়া হয়নি।